বড় ঋণখেলাপিরা কি বিচারের ঊর্ধ্বে থাকবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেছেন, ঋণখেলাপিরা আইনের চেয়ে শক্তিশালী নয়। তাহলে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে, আপনারা ধরছেন না কেন? যারা বড় বড় ঋণখেলাপি তারা কি বিচারের ঊর্ধ্বে থাকবে? যারা অর্থশালী তারা কি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে? দুদক রাঘববোয়ালদের নয়, শুধু চুনোপুঁটিদের ধরতে ব্যস্ত আছে।

গতকাল রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির মামলায় ব্যাংকটির সাবেক কর্মকর্তা এএসএম হাসানুল কবিরের জামিন বাতিল চেয়ে আবেদনের শুনানির সময় আদালত এ মন্তব্য করেন। ২০১৩ সালে এ মামলা হয়। কিন্তু এত দিনেও মামলাটির তদন্ত শেষ না হওয়ায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এমএ আজিজ খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। দুদকের আরেক আইনজীবী খুরশিদ আলম খানও এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি খাজা সোলায়মান আনোয়ার চৌধুরীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় ২০১৩ সালের ২৯ মার্চ মামলা করেন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ইস্কাটন শাখার ম্যানেজার নকীবুল ইসলাম। এ মামলায় ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর ব্যাংকটির তৎকালীন ডেপুটি ম্যানেজার এএসএম হাসানুল কবীর ও জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জান্নাতুল মাওয়াসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়।

২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর এই দুজনকে জামিন দেন বিচারিক আদালত। পরে সেই জামিন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে দুদক। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে এ মামলা পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

গতকাল ওই দুজনের জামিন বাতিল প্রশ্নে রুল শুনানিতে হাইকোর্ট দুদকের আইনজীবীদের বলেন, ১১০ কোটি টাকা নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ২০১৩ সালে মামলা হয়েছে। এ মামলায় এখনও কেন বিচার হচ্ছে না? এদের ধরবে কে? আপনারা ধরছেন চুনোপুঁটি।

তখন আদালতে উপস্থিত থাকা দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, অবশ্যই দুদকের ধরা উচিত, এদের ধরা হবে।

এ সময় আদালত বলেন, কবে ধরবেন? মামলা ২০১৩ সালে। চার্জশিট ২০১৫ সালে। এরপর ফের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কোর্ট। এত বছর হয়ে গেল। এগুলোর কী হবে? এতে কি বোঝা যায় না যারা অর্থশালী, পাওয়ারফুল, তারা বিচারের ঊর্ধ্বে? এরা ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন? আপনারা বিষয়টি সিরিয়াসলি নিতে দুদক চেয়ারম্যানকে বলবেন-এ ধরনের মামলাগুলো কেন শেষ হচ্ছে না, কেন প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে না? নয় বছর চলে গেছে। এ সময় এক আসামির আইনজীবী বলেন, আমরা তো নিম্নস্তরের ব্যাংকার। তখন আদালত প্রশ্নে করে বলেন, মামলার প্রধান আসামি খাজা সোলায়মান কে?

জবাবে খুরশিদ আলম খান বলেন, বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি, তিনি পলাতক। এক মামলায় তার সাজা হয়েছে। তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারে আপনার কোর্টের আদেশ আছে। 

তখন আদালতে অন্য মামলার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আসেন। আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দেখেন অ্যাটর্নি জেনারেল, মামলার অবস্থা। ২০১৩ সালের মামলা এখনও প্রতিবেদন দেননি। ১১০ কোটি টাকার মামলা। এরপর দুদক আইনজীবী বলেন, আমরা হালনাগাদ তথ্য জানাব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০