Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:37 pm

বড় কোম্পানি সফটওয়্যারে ‘অ্যাক্সেস’ দিতে রাজি

রহমত রহমান: বড় অঙ্কের ভ্যাট প্রদানকারী দেশীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের ‘ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড’ চেয়েছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)। আইন অনুযায়ী এলটিইউভুক্ত এসব প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যারে এই ‘অ্যাক্সেস (প্রবেশাধিকার)’ চেয়ে ৩ আগস্ট একটি আদেশ জারি করে এলটিইউ। এলটিইউ বলছে, সফটওয়্যারে আক্সেস দেয়া হলে রাজস্ব প্রদানে স্বচ্ছতা আসবে। এছাড়া এলটিইউ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় এবং সময় হ্রাস হবে। তবে আদেশ জারির পর এ নিয়ে দেশি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিধা ও শঙ্কা তৈরি হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তাদের অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারে অ্যাক্সেস দেয়া হলে ডেটার ক্ষতি ও তথ্যের গোপনীয়তা প্রকাশ হওয়ার ঝুঁকি

থাকবে। তবে এলটিইউর সঙ্গে আলোচনার পর প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাক্সেস দিতে রাজি হয়েছে বলে এলটিইউ সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রমতে, দেশের মূসক লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশ জোগান দেয় এলটিইউভুক্ত ১১১ প্রতিষ্ঠান। বিদায়ী অর্থবছরে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব প্রদান করেছে এসব প্রতিষ্ঠান। দেশি ও বহুজাতিক এসব কোম্পানি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের (এমসিসিআই) ও ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সদস্য। এলটিইউ থেকে ৩ আগস্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড চেয়ে একটি আদেশ জারি করা হয়। আদেশ জারির পর আইডি-পাসওয়ার্ড সরবরাহ করা নিয়ে দেশি-বিদেশি এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বিধা ও শঙ্কা তৈরি হয়। ১১ আগস্ট এমসিসিআই এলটিইউকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেয়, যাতে বলা হয়, ‘প্রতিষ্ঠানের ব্যবহƒত ব্যবসায়ের হিসাব-সংক্রান্ত সফটওয়্যারের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিষয়, যা শেয়ার করা কাক্সিক্ষত নয়।

এলটিইউ অধিক্ষেত্রাধীন ১১১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫১টি প্রতিষ্ঠান এমসিসিআই’র সদস্য। সেজন্য বিষয়টির পুনর্বিবেচনা বা বিকল্প পদক্ষেপ নিতে এলটিইউকে অনুরোধ করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর শঙ্কা দূর করতে এমসিসিআই ও ফিকির সঙ্গে সভার আয়োজন করা হয়। গত ২৩ আগস্ট এলটিইউ’র সম্মেলন কক্ষে এমসিসিআই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ৩০ আগস্ট ফিকির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুটি সভায় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এলটিইউকে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড প্রদানে রাজি হয়।

সভায় এমসিসিআই’র ভাইস প্রেসিডেন্ট কামরান টি রহমান এলটিইউ’র কাছে চারটি বিষয় জানতে চান, তা হলোÑজারি করা আদেশের আইনগত ভিত্তি ও বাধ্যবাধকতা; ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হলে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টিং সফওয়্যারে রক্ষিত ডেটার কোনো ক্ষতি হলে তার আইনগত দায়বদ্ধতা কার ওপর বর্তাবে; সফটওয়্যার থাকা পণ্য বা সেবার মূল্য নিরূপণ-সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তা প্রকাশ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে কি না; প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও উন্নয়ন তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষিত হবে কি না।

সভায় স্কয়ার ফার্মার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যারের তথ্য দেশের বাইরে ক্লাউডে রক্ষিত হয়। এ ক্লাউডে এলটিইউকে অ্যাক্সেস প্রদান করার ক্ষেত্রে যে কোনো একটি ডিভাইসকে অথরাইজ করা সম্ভব। কারণ ইলেকট্রনিক তথ্যের ইন্টিগ্রিটি ও প্রোটেকশনের জন্য কখন কোন ডিভাইস বা আইপি অ্যাড্রেস থেকে ডেটাবেজে প্রবেশ করতে করা হয়েছে, তা চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ করা বাস্তব ঝুঁকির কারণেই প্রয়োজন।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের জোয়ার্দারও তার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন। ইনসেপ্টা ফার্মার নির্বাহী পরিচালক (ফাইন্যান্স) নাইমুল হুদা ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটসের (আইপিআর) কারণে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর বা সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ব্যতীত এলটিইউকে আইডি-পাসওয়ার্ড প্রদান করা সম্ভব নাও হতে পারে।

সভায় এমসিসিআইর ভাইস প্রেসিডেন্ট হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, আইডি-পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্তসহ মূল সফটওয়্যারের সব তথ্য এলটিইউ’র প্রয়োজন হবে না। প্রাপ্ত তথ্যের ব্যাপকতা এবং কোন কোন তথ্য মূসকসংশ্লিষ্ট হবে, তা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্পষ্টীকরণ করা না হলে মূসক কর্তৃপক্ষ ভুল বুঝতে পারে। এর ফলে ‘প্রিম্যাচিউর’ রাজস্ব দাবির সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ডেটাবেজের কোনো পরিবর্তন করা হলে প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক কার্যক্রম চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে সভার সভাপতি ও এলটিইউ কমিশনার বলেন, যে আইডি-পাসওয়ার্ড চাওয়া হয়েছিল, তা কেবল এ দপ্তরের অনুমোদিত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের তথ্য কেবল অবলোকন, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ ও নিরীক্ষা করতে পারবেন; তথ্যের কোনো ধরনের সংযোজন, বিয়োজন, সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারবেন না। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মূসক-সংশ্লিষ্ট করদায়িতা নিরূপণ সহজ ও স্বচ্ছ হবে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা-সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারের কোনো অ্যাক্সেস এ দপ্তর থেকে চাওয়া হয়নি। কারণ এ বিপুল তথ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাসিক দাখিলপত্রের তথ্য যাচাই, উৎসে কর্তন এবং রাজস্ব জমার তথ্য, ডেবিট ও ক্রেডিট নোটের তথ্য যাচাই, রেয়াত গ্রহণ প্রভৃতিসহ নিরীক্ষা ও করদায়িতা নিরূপণে প্রয়োজনীয় নয়। কেবল মূসক-সংক্রান্ত যাচাই কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য এই অ্যাক্সেস প্রয়োজন।

সভাপতি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যের প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে হলে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ দপ্তর থেকে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারে অ্যাক্সেস গ্রহণের মাধ্যমে যেসব তথ্য সংগ্রহ ও নিরীক্ষা করা হবে, তা হার্ড কপিতে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত এ দপ্তরে দাখিল করে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের কেন্দ্রীয় সফটওয়্যারে এ দপ্তরকে ‘রিড অনলি আক্সেস’ প্রদান করেছে, যাতে এ দপ্তরের অধিক্ষেত্রাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংকিং এলসিসহ ও অন্যান্য তথ্য অনলাইনে অল্প সময়ে যাচাই করা যায়। এক্ষেত্রে পূর্ণ নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা এ দপ্তর থেকে রক্ষা করা হচ্ছে। বৃহদাকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করে ব্যয় হ্রাস এবং কর্মঘণ্টা সাশ্রয় করতে হলে হার্ড কপিতে তথ্য দাখিলের পরিবর্তে ‘অনলাইনে ডেটা আক্সেস অ্যান্ড ট্রান্সফার’-এর বিকল্প নেই। সভাপতির এই বক্তব্যের সঙ্গে সভায় উপস্থিত সবাই ঐকমত্য পোষণ করেন।

অপরদিকে এলটিইউর সঙ্গে ফিকির প্রতিনিধিদের সভায় একই সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানগুলোর আইটি উইংয়ের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হবে।