মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: সূচকের বড় পতনে আস্থায় ফাটল ধরেছে বিনিয়োগকারীদের। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না থাকায় বিনিয়োগ নিয়ে দোলাচলে পড়েছেন তারা। একইভাবে বাজারে নতুন অর্থলগ্নি না করে উল্টো বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন অনেকে। সবমিলে তাদের আস্থার অবস্থা নড়বড়ে। তবে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এখনও পুঁজিবাজার নিয়ে দুশ্চিন্তা করার সময় আসেনি।
বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এক বছরের বেশি সময় ধরে বাজার স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বাজারে ছন্দপতন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকার বদলে বেশিরভাগ দিনই নি¤œমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় দেখা যাচ্ছে বড় পতন। এতে মনোবল ভেঙে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। ফলে বাজারসংশ্লিষ্টরা যতই আশার কথা শোনান না কেন, তাতে আস্থা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।
গত এক মাসের (কার্যদিবস) বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ সময় বাজারে ছয় দিন বড় পতন দেখা যায়। গতকালও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক হ্রাস পায় ৯৫ পয়েন্ট। পাশাপাশি এক দিনের ব্যবধানে বাজার মূলধন হ্রাস পায় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। গতকাল দিন শেষে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও ফান্ডের বাজার মূলধন দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা।
তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে সিঁদুরে মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাদের অবস্থা করুণ হবে বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেন। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বাজার-সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক মন্তব্যের ওপরও আস্থা রাখতে পারছেন না তারা। কারণ পুঁজিবাজারে এর প্রতিফলন নেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. সাইফুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, সংশ্লিষ্টরা বলছেন পুঁজিবাজারে এখন বিনিয়োগ করার সময়। এখানে বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এর উল্টো চিত্র। বাজার ভালো হবেÑএ আশায় বারবার নতুন বিনিয়োগ করে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটি পুঁজিবাজার চাই যেখানে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা থাকবে।
এদিকে সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু বাজারে এমন কোনো পরিস্থিতি হয়নি, যার জন্য লাগাতার পতন হতে পারে। মূলত বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে পেনিক সেল করছেন, যার প্রভাবে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। তাদের শেয়ার বিক্রয় চাপে বাজারে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের মনোগত কারণে পতন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাদের আস্থা বাড়লে পুঁজিবাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে সূচকের হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি স্বাভাবিক। পুঁজিবাজারে সূচক হ্রাস-বৃদ্ধি পাবে এটাই নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা সহজে বিচলিত হন। ফলে পেনিক সেল বেড়ে যায়। তাই পতন নেমে আসে। কোনো কারণে বাজারে পতন নেমে এলে ভীত হয়ে শেয়ার ছেড়ে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বরং এ সময় তাদের ধৈর্য্যরে পরিচয় দেয়া উচিত।
একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সিকিউরিটি হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না। এ কারণে কৃত্রিম তারল্য সংকট চলছে, যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।