শেয়ার বিজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফল নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার এখনও অবসান হয়নি। ভোটের তিন দিন পার হয়ে গেলেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা শেষ হয়নি। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তুমুল লড়াইয়ে ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও শেষ মুহূর্তে এসে তাকে ছাড়িয়ে গেলেন ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন। এতে নিশ্চিতভাবেই ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের জয়ী আসনের ব্যবধান বাড়ছে। তবে বিষয়টি যদি আদালতে গড়ায় তাহলে ম্যাজিক ফিগার পেয়েও নিজেকে জয়ী বলতে পারবেন না বাইডেন। অপেক্ষা করতে হবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য। তাই চূড়ান্ত ফল কবে জানা যাবে, তা এখনও অস্পষ্টই রয়ে যাচ্ছে। খবর: বিবিসি, রয়টার্স ও সিএনএন।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়েছে। এতে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ৯১৭ ভোটে পেছনে ফেলেছেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ডাকযোগে পৌঁছানো ভোটই মূলত শেষ সময় গণনা করা হচ্ছে। ফলে দুই প্রার্থীর চূড়ান্ত ফলাফল বদলে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল বর্তমানে যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, তাতে হোয়াইট হাউসে পৌঁছাতে হলে জো বাইডেনকে অ্যারিজোনা, নর্থ ক্যারোলিনা, নেভাদা ও জর্জিয়ার মধ্যে অন্তত দুটিতে কিংবা পেনসিলভানিয়ায় জয়লাভ করতে হবে। অ্যারিজোনায় এরই মধ্যে জো বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা এপি ও সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ। সে কারণেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দুই প্রার্থীর ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যার পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। তবে অ্যারিজোনায় এখন পর্যন্ত যেমন জো বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করা হয়নি, তেমনি জর্জিয়াতে এগিয়ে গেলেও তার জয় নিশ্চিত নয়। রাজ্য দুটির চূড়ান্ত ফলাফলে তিনি জিতলেই পরবর্তী চার বছর হোয়াইট হাউসের দখল পাবেন।
জর্জিয়ায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তাতে বাইডেন ৪৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ বা ২৪ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭১ ভোট পেয়েছেন। অপরদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ বা ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫৪ ভোট। এপি ও ফক্স নিউজের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাইডেনের ইলেক্টোরাল ভোট ২৬৪ হলেও সিএনএন-সহ অন্যান্য জরিপ অনুযায়ী তার ইলেক্টোরাল ভোট ২৫৩টি। এপি ও ফক্স নিউজের পূর্বাভাসে অ্যারিজোনায় বাইডেনকে জয়ী বলা হলেও সেখানে শেষ খবর অনুযায়ী কয়েক লাখ ভোট গণনা বাকি। ১১ ইলেক্টোরাল ভোটের এ অঙ্গরাজ্যে আদতে বাইডেন জিতবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে এপি তাদের পূর্বাভাসের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারির কারণে এ বছর ভোট গণনায় প্রচুর সময় লাগছে। বিপুল পরিমাণ ডাক ভোটও একটি কারণ। এখনও বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ভোট গণনা চলছে। কিন্তু ভোট গণনা শেষ হলেই কি চূড়ান্ত ফল জানা যাবে? অনেকেই বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন এবং আদালত যদি মামলা গ্রহণ করেন, তা হলে চূড়ান্ত ফলাফল সহসাই ঘোষণা করা সম্ভব হবে না।
জর্জিয়া, পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনায় এখনও ভোট গণনা শেষ হয়নি। এই অঙ্গরাজ্যগুলোর ফল প্রকাশিত হলে জানা যাবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন। এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। তবে বিষয়টি যদি আদালতে গড়ায়, তাহলে ম্যাজিক ফিগার পেয়েও নিজেকে জয়ী বলতে পারবেন না বাইডেন। অপেক্ষা করতে হবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের।
এদিকে ভোটচিত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে পড়ে রিপাবলিকান ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। এ অবস্থায় ট্রাম্প ভোট নিয়ে লাগামহীনভাবে ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলে চলছেন। উল্টোপাল্টা কথার জন্য এখন ট্রাম্পকে তার নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির নেতারাই তুলাধোনা করছেন।
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এই বক্তব্যে ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগে তিনি আবার নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। বক্তব্যে নানা ভিত্তিহীন দাবি করেন তিনি, করেন মিথ্যা অভিযোগ। ট্রাম্প তার বক্তব্যে বৈধ ভোটকে অবৈধ বলে দাবি করেন। তিনি ফের ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ভোট গণনা করা হচ্ছে। বৈধভাবে ভোট গণনা হলে তিনি জয়ী হতেন। জালিয়াতি করে তাকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ট্রাম্প ভিত্তিহীন বক্তব্য উপস্থাপন করতে থাকলে কয়েকটি চ্যানেল তাদের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। ট্রাম্পের বক্তব্য খোদ রিপাবলিকান শিবিরেই সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
মেরিল্যান্ডের রিপাবলিকান গভর্নর ল্যারি হোগান বলেছেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে খাটো করছেন। ল্যারি হোগান টুইটারে এই মন্তব্য করেন। ট্রাম্পের বক্তব্য নিয়ে টেক্সাসের রিপাবলিকান প্রতিনিধি উইল হার্ট টুইট করেছেন। তিনি বলেন, ‘একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে খাটো করছেন। তিনি কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই অগণিত আমেরিকানের মতামতের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এটা শুধু বিপজ্জনকই নয়, ভুলও বটে। এটা আমাদের জাতির ভিত্তিকেই খাটো করছে।’ ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান প্রতিনিধি অ্যাডাম কিনজিঙ্গার তার দলের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন। ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি টুইটে বলেছেন, ‘ভুল তথ্য ছড়ানো বন্ধ করুন।’
এদিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন এক টুইটে বলেন, ‘কেউ আমাদের গণতন্ত্রকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। এখন নয়, কখনোই নয়।’ এদিন বাইডেন একাধিক টুইট করেছেন। একটি টুইটে তিনি সব ভোট অবশ্যই গণনা করতে হবে বলে উল্লেখ করেন। আরেকটি টুইটে বাইডেন উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোট গণনা বন্ধ করতে আদালতে যাচ্ছেন। ভোট গণনা নিয়ে ট্রাম্পের দাবির বিপক্ষে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন বাইডেন।