বড় হচ্ছে সাদিক অ্যাগ্রো

নজরুল ইসলাম: সাতটি দুধের গাভী দিয়ে শুরু। ধীরে ধীরে পরিণত হয় বাণিজ্যিক খামারে। এখন ছোট ও বড় আকারের ২ হাজার ৫০০ গরু রয়েছে। এছাড়া কোরবানির জন্যও বিভিন্ন পশু রয়েছে খামারটিতে। উৎপন্ন করা হয় দুধ ও মাংস। তাছাড়া দুধ ও মাংস দিয়ে বেকারি এবং ডেইরি পণ্যও তৈরি করা হয়। অনলাইনেও ক্রেতাদের অর্ডার নেয়া হয়। রয়েছে হোম ডেলিভারি। অ্যাগ্রো খাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ‘সাদিক অ্যাগ্রো’ এভাবেই বড় হচ্ছে।

খামারটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এমরান হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নির্ভেজাল খাবার মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াই সাদিক অ্যাগ্রোর মোটো।’ সরেজমিন খামারটিতে গেলে তিনি এসব কথা জানান।

মোহাম্মদ এমরান হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ডিপার্টমেন্ট স্টোরে যেমন সব পাওয়া যায়। আমাদের এখানেও ক্রেতারা সব পাবেন। কোরবানির জন্য যে পশুই চিন্তা করবেন, সবই পাবেন। গরু, ছাগল, বনগরু, উট, গয়াল, দুম্বা, ভেড়া ও মহিষ সবই আছে। এছাড়া আমাদের আরও একটি সার্ভিস রয়েছে। কেউ চাইলে আমরা পশু জবাই দিয়ে কেটে-কুটে প্যাকেটিংও করে দিই। বাসায়ও পৌঁছে দেয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘দেশে আমরাই একমাত্র খামারি, যারা গরুর মাংস ও দুধকে ভ্যালু অ্যাডেড করি। নিজেদের উৎপাদিত মাংস দিয়ে আমরা বিভিন্ন খাবার তৈরি করি। বিরিয়ানি ও পোলাও তৈরি করি। বিভিন্ন ধরনের কলিজার সিঙ্গারা ও বিফ পেটিস তৈরি করি। দুধ দিয়ে মিষ্টি, দই, ঘি সবই তৈরি করি। সারাদেশে সরাসরি কোনো খামারি এসব তৈরি করে না। শুধু আমরাই করি।

মোহাম্মদ এমরান হোসাইন বলেন, ‘আশপাশে এত দূষণ দেখে এই উদ্যোগ। মানুষকে ভালো কিছু খাওয়াতে চাই। ভেজালের শহরে একটু নির্ভেজাল কিছু। এই তাগিদ থেকেই শুরু। শুরু থেকেই আমার এক নীতি। আমি যেটা খেতে চেয়েছি। আমি যেটা পছন্দ করেছি। আমি যেটা খাওয়ার আকাক্সক্ষা করেছি। সেটাই উৎপাদন করেছি। সেটাই আমরা খেয়েছি। আমি সেগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে খাই। মানুষকে খাওয়াই। এটাই আমার মোটো। এভাবেই আমাদের সাদিক অ্যাগ্রোর শুরু এবং চলছে।’

তিনি জানান, ২০০৮ সালে সাতটি দুধের গাভী দিয়ে শুরু হয় তাদের পথচলা। এখন দুধের ও ষাঁড় মিলিয়ে ছোট-বড় ২ হাজার ৫শ গরু রয়েছে। ২০১১-১২ সালের দিকে তাদের ব্যবসার বিস্তৃতি হয়।

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য তিনি বলেন, ‘শুধু ইউটিউব দেখে খামারি হতে গেলে তারা ক্ষতিতে পড়বেন। কারণ ইউটিউবে শুধু সফলতার কথা বলা হয়। ব্যর্থতার কোনো কথা নেই। কষ্টের কথা নেই। প্রশিক্ষণ ছাড়া সফলতা সম্ভব নয়। বাস্তবিক জ্ঞান নিয়ে তারপর শুরু করতে হবে। কারও খামার থেকে আগে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। বাগানের গাছে যেমন ফুল থাকে, তেমনি কাঁটাও থাকে।’

সাদিক অ্যাগ্রোর শুধু ঢাকার খামারে ৩১৫ জন কর্মী কাজ করছেন বলে তিনি জানান। এখানে বেকারি ও ডেইরি পণ্য তৈরির কারখানাও রয়েছে। এছাড়া কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, পাবনা ও খুলনায়ও খামার রয়েছে। সেখানেও অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ভারত থেকে মহিষের হিমায়িত মাংস আমদানি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেগুলো সেখানে চলে না। সেগুলো আমাদের দেশে পাঠানো হয়। আমরা ডাম্পিংয়ে পরিণত হয়েছি। এগুলো আমদানি না হলেই দেশের মঙ্গল।’

কভিডকালে প্রাণিসম্পদ খাতে সরকারের দেয়া প্রণোদনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাড়ে ৮শ কোটি টাকার ৭০ ভাগের বেশি টাকা খামারিরা পাননি। এগুলো নিয়ে ছিনিমিনি করা হয়েছে।’

সাদিক অ্যাগ্রোর সিইও ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ এমরান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কভিডকালে ব্যবসার প্রসার আরও বেড়েছে। লকডাউনের দ্বিতীয় দিন থেকেই আমরা হোম ডেলিভারি শুরু করেছি। প্রথমে মাংস ও দুধ হোম ডেলিভারি দেয়া হয়। পরে মাংস ও দুধ থেকে তৈরি অন্যান্য পণ্যও হোম ডেলিভারি দেয়া শুরু হয়। গত দুই বছরে মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যের চারটি শোরুমও চালু করা হয়েছে। কভিডকালে অনেকে কর্মীদের বেতন দিতে পারেনি। কিন্তু আমাদের সেই সমস্যায় পড়তে হয়নি। বরং আমাদের ব্যবসা আরও বড় হয়েছে।’

শাহ এমরানের মন্তব্য, তারা কম মূল্যে মানুষকে মাংস খাওয়াতে চান। সেজন্য ব্রাহামা জাতের গরু আমদানি করা দরকার। এই গরুতে মাংস উৎপাদন বেশি হয়।

দুধ বিক্রির বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর সরকারের কোনো নজরদারি নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। বাজার ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা গেলে খামারিরা লাভবান হবেন। বন্ধ হবে নিন্মমানের গুঁড়াদুধ আমদানি। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০