ক্রীড়া ডেস্ক: সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্রয়ের সুবাদে শ্রীলঙ্কা সফরের শেষটাতে ভালো কিছুর আশা করেছিল বাংলাদেশ। সে সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল টিম টাইগার্স। কিন্তু পাল্লেকেলে টেস্টের তৃতীয় দিনের বিকাল থেকে হঠাৎ খেঁই হারিয়ে ফেলে মুমিনুল হকের দল। এর মূল্যটা রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যদের দিতে হয় বড় ব্যবধানে হেরে। এ অভিজ্ঞতা সঙ্গী করে লঙ্কা মিশন শেষ করে ফিরতে হচ্ছে লাল-সবুজ প্রতিনিধিদের।
দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে সোমবার জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২৬০ রান। হাতে ছিল ৫ উইকেট। কিন্তু দিনের শুরু থেকে মুমিনুল হকের দল নিয়মিত বিরতিতে হারাতে থাকে উইকেট। একটু লড়াই করেছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৯ রান। প্রথম সেশনে ২৩ ওভার খেলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ৪৩৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে টাইগাররা গুটিয়ে যায় ২২৭ রানে। তাই ২০৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরে বাংলাদেশ সিরিজ হারে ১-০ ব্যবধানে। সিরিজের প্রথম টেস্ট হয়েছিল ড্র।
পাল্লেকেলে টেস্টে বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছেন প্রবীণ জয়া বিক্রমা। দুই ইনিংসে এ স্পিনার নিয়েছেন ১১ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্ন শেষ করে দেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনিই করুণ সমাপ্তিটা টেনেছেন ৫ উইকেট নিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকে কমপক্ষে ১০ উইকেট পাওয়া ১৬তম ক্রিকেটার তিনি। এখানেই শেষ নয়। ১৯৮০ সালের পর জয়াবিক্রমা টেস্ট অভিষেকে কমপক্ষে ১০ উইকেট পাওয়া চতুর্থ বোলার। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪০ রান আসে মুশফিকের ব্যাট থেকে। শেষ দিকে মেহেদি হাসান করেন ৩৯ রান।
বড় ব্যবধানে হারের শঙ্কাটা বাংলাদেশ শিবিরে ভর করেছিল রোববার বিকালে। ওই দিনই যে টাইগাররা বিশাল লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে হারিয়ে বসে টপ অর্ডারের ৫ ব্যাটসম্যানকে। তারপরও লিটন কুমার দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজের ওপর ভরসা করেছিল সফরকারীরা। কিন্তু সোমবার দিনের শুরুতে হতাশ করেন লিটন। তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে প্রবীণ জয়াবিক্রমা আঘাত হানেন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। তার শর্টেস্ট লেন্থ ডেলিভারি
লিটন দাসের ব্যাটের ফাঁক গলে খুঁজে নেয় তার পা। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েছিলেন; কিন্তু বল স্টাম্প স্পর্শ করায় কোনো লাভ হয়নি। ১৪ রানে দিন শুরু করেছিলেন; মাত্র ৩ রান যোগ করে ১৭ রানে সাজঘরে ফেরেন লিটন।
সেট হয়ে লিটন ফিরলেও এক প্রান্তে মিরাজ খেলছিলেন বেশ দেখেশুনে। তাকে বেশ সঙ্গ দিচ্ছেলেন তাইজুল ইসলাম। দুজনের ১১ ওভারের জুটিতে আসে ২৩ রান। এর পরই তাদের জুটি ভাঙেন ধনঞ্জয় ডি সিলভা। তার বলে খুব অলস ভঙ্গিতে খেলে শটে কট বিহাইন্ড হন ২ রান করা তাইজুল। এরপর তাসকিন আহমেদকে নিয়ে দ্রুত রান তোলার দিকে মনোযোগ দেন মিরাজ। বেশ কিছু বাউন্ডারি হাঁকিয়ে এ জুটিতে আসে ২১ রান। ইনিংসের ৭০তম ওভারে তাসকিনের বিদায় ভাঙে অষ্টম উইকেট জুটি। তাসকিন করেন ৩৩ বলে ৭ রান। এর পরের ওভারে প্রবীণ জয়াবিক্রমের বলে প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে শর্ট লেগে দাঁড়ানো পাথুম নিসাঙ্কার দারুণ বুদ্ধিমতায় সাজঘরে ফেরেন মিরাজ। দুই বল পর লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন আবু জায়েদ রাহি। এর সঙ্গে টাইগারদের বড় হার নিশ্চিত হয়।
বল হাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ম্যাচসেরা হয়েছেন প্রবীণ জয়াবিক্রমে। এদিকে পুরো সিরিজে ব্যাট হাতে দারুণ খেলার পুরস্কারস্বরূপ দিমুথ করুণারতেœ পেয়েছেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৪৯৩/৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৫১
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ১৯৪/৯ (ডিক্লেঃ)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২২৭ (মুশফিক ৪০, মিরাজ ৩৯; জয়াবিক্রমে ৫/৮৬)
ফল: ২০৯ রানে জয়ী শ্রীলঙ্কা
সিরিজ: শ্রীলঙ্কা ১-০ ব্যবধানে জয়ী
ম্যাচসেরা: প্রবীণ জয়াবিক্রমে
সিরিজ সেরা: দিমুথ করুণারত্নে