রহমত রহমান: আমদানি করে বন্ড সুবিধায় এক্সেসরিজ খাতের কাঁচামাল। নিয়ম অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করার কথা। কিন্তু পণ্য উৎপাদন না করে তা সরাসরি খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়। এক্সেসরিজ খাতের আলফা এক্সেসরিজ অ্যান্ড এগ্রো এক্সপোর্ট লিমিটেডের বিরুদ্ধে রয়েছে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের এমন অভিযোগ।
অভিযোগের সত্যতা ও রাজস্ব ফাঁকি পাওয়ায় বাগেরহাটে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত ও বিন (ব্যবসায়িক শনাক্তকরণ নম্বর) লক করেছে মোংলা কাস্টম হাউস। এক পরিদর্শনে প্রায় ২৪ কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। ২০১৮ সালে বন্ড লাইসেন্স পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি গত দুই বছরে একইভাবে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারে করে আসছে বলে প্রমাণ পেয়েছে মোংলা কাস্টম হাউস। ফলে প্রতিষ্ঠানটির সব অনিয়ম খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য দুই দিন ধরে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরজান আলীকে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরপরই তিনি মোবাইল কেটে দেন। পরে খুদেবার্তা পাঠালেও জবাব দেননি। গতকাল এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে তিনি একটি মিটিংয়ে রয়েছেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে ফোন করা হলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।
এনবিআর সূত্র জানায়, আলফা এক্সেসরিজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ডের কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করে আসছে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের নির্দেশে মোংলা কাস্টম হাউস তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়। ২৭ আগস্ট মোংলা কাস্টম হাউসের একটি টিম বাগেরহাটের ফকিরহাট এলাকার প্রতিষ্ঠানটির বন্ড গুদাম পরিদর্শন করে। এ সময় বন্ড রেজিস্টারের সঙ্গে মজুত কাঁচামালের ব্যাপক গরমিল ও অনিয়ম পাওয়া যায়। পরে টিম কমিশনার হোসেন আহমদের কাছে প্রতিবেদন দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের বন্ড গুদামে ১০০ দশমিক ৭২৫ মেট্রিক টন পিপি/এলডিপিই, ৪৪ দশমিক ৫৫৬ মেট্রিক টন বিওপিপি, ৪৬৮ দশমিক ৭৭৮ মেট্রিক টন ডুপ্লেক্স বোর্ড, ১১৫ দশমিক ২৭৬ মেট্রিক টন আর্টকার্ড, ৩৪৯ দশমিক ০৮৯ মেট্রিক টন ক্রাফট লাইনার পেপার ও ৪০ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন পেস্টিং গাম পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বন্ড রেজিস্টারে উল্লেখিত পরিমাণ থেকে তিন হাজার ৬০৪ দশমিক ৩৩৮ মেট্রিক টন পিপি/এলডিপিই, দুই হাজার ২২৮ দশমিক ১৭৭ মেট্রিক টন বিওপিপি ফিল্ম, ২৬৯ দশমিক ৫৪৯ মেট্রিক টন ডুপ্লেক্স বোর্ড ও ৫৮৮ দশমিক ১৭৪ মেট্রিক টন পেস্টিং গাম কম রয়েছে। এসব কাঁচামাল প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে বলে ধারণা করছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
অপরদিকে বন্ড গুদামে বন্ড রেজিস্টারের চেয়ে ৪৯ দশমিক ৩৯৫ মেট্রিক টন ক্রাফট লাইনার পেপার ও ১১০ দশমিক ৩৮৬ মেট্রিক টন আর্টকার্ড বেশি পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি শুল্ককর ফাঁকি দিতে অবৈধভাবে ছয় হাজার ৬৯১ দশমিক ০৩৮ মেট্রিক টন কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণ করেছে। এছাড়া ১৫৯ দশমিক ৭৮১ মেট্রিক টন কাঁচামাল রেজিস্টারে উল্লেখ করার চেয়ে অতিরিক্ত ইন্টু বন্ড করেছে। অপসারিত কাঁচামালের শুল্ককর প্রায় ২৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে এসব কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণ করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে পরিদর্শন টিম। অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে কাস্টমস আইন, ১৯৬৯ এবং বন্ড লাইসেন্স শর্ত লঙ্ঘন করেছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির আমদানি ও ইনবন্ড-সংক্রান্ত কার্যক্রমে দেখা যায়, এনবিআরের আদেশ অনুযায়ী শুল্ক ভবন থেকে পণ্য খালাসের তারিখ থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ইন্টু বন্ড করতে হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সেই নিয়ম পালন করেনি। অনিয়ম করায় প্রতিষ্ঠানটির বন্ড লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত ও বিন লক করে ৩১ আগস্ট আদেশ জারি করেছে মোংলা কাস্টম হাউস। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বন্ড সুবিধায় আমদানি করা সব চালান খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বন্ড লাইসেন্স সাময়িকবঅভৈ স্থগিত ও বিন লকের সত্যতা নিশ্চিত করেন মোংলা কাস্টম হাউস কমিশনার হোসেন আহমেদ। শেয়ার বিজকে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি এর আগে একই কায়দায় ফাঁকি দিয়েছে কি না, আমরা তা অনুসন্ধান করছি। তবে আমরা বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির যে অডিট করছি, তাতে আরও শুল্ককর ফাঁকি বের হতে পারে। আমরা বিভিন্ন শুল্ক স্টেশন থেকে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি।’