Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 11:23 pm

বন্ড মার্কেটের দুর্বলতায় ব্যাংক খাতে চাপ বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট এখনও দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কর জটিলতা ও নতুন পণ্য কম থাকায় বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ, আইনি অস্পষ্টতা, প্রচারের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারছে না এ খাত। দুর্বল বন্ড মার্কেটের কারণে ব্যাংকগুলো ডিপোজিট ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারছে না। বন্ড ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে করপোরেট সেক্টর বন্ড মার্কেটের পরিবর্তে পুরোপুরি ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এতে দুর্বল বন্ড মার্কেটের কারণে ব্যাংক খাতের ওপর চাপ বাড়ছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থাপিত প্রবন্ধে এ কথা উঠে এসেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে চীন, অস্ট্রেলিয়া, হংকংসহ অনেক দেশ বন্ড মার্কেটের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছে, কিন্তু বাংলাদেশে এর বিপরীত চিত্র।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ডেভেলপমেন্ট অব বন্ড মার্কেট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্মস অ্যাডভাইজার এবং সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্মস অ্যাডভাইজার ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এটা এখন অত্যন্ত জরুরি, কারণ বন্ড মার্কেটের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী ও কর্তৃপক্ষ উভয়ই লাভবান হবে। ইসলামি বন্ডসহ বিভিন্ন বন্ডের বিষয় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
বন্ডগুলো যাতে অল্প সময় ও সহজ প্রক্রিয়ার মধ্যে তালিকাভুক্ত হতে পারে, এটা নিয়ে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করব। বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এটা প্রসার করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ ও এনবিআরসহ নীতিনির্ধারণী সংগঠনগুলোর যৌথভাবে কাজ করা দরকার। বন্ড মার্কেটকে এগিয়ে নিতে যতœশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের। এটিকে শক্তিশালী করতে হলে বর্তমান রেপো আইন পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তিনি মনে করেন।
গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। তিনি অধিকতর দক্ষতর সঙ্গে বন্ড মার্কেট উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী।
গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী। ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এ গবেষণা সম্পন্ন করেন। গবেষণাদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল মোস্তফা, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমীন, বিআইবিএমের প্রভাষক রিফাত জামান সৌরভ, বিআইবিএমের প্রভাষক সাদনিমা আমীর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মো.হাবিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি।
বৈঠকে বিআইবিএমের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন ও পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী বলেন, বাংলাদেশে বন্ড মার্কেটে নতুন অনেক সিকিউরিটিজ আনতে হবে। এতে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখাবে। এজন্য তিনি জিরো কুপোন বন্ড, সুকুক বন্ডের মতো পণ্য আনা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, একসময় বন্ড মার্কেট নিয়ে কোনো আলোচনাই ছিল না, কিন্তু এখন আলোচনা হচ্ছে এটাই আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক। বন্ড মার্কেটের প্রসার করতে হলে অবশ্যই নীতিনির্ধারণী সংস্থাগুলোর সমন্বয় প্রয়োজন। এ খাতকে পরিচালনা করতে হলে দক্ষ জনশক্তি তৈরির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ভিশন ২০৪১ অর্জন করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের প্রয়োজন। অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশের বন্ড মার্কেটের বিস্তৃতি অনেক কম। এ অবস্থার পরিবর্তনে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শুধু ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এজন্য ব্যাংকের পাশাপাশি বন্ড মার্কেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই মার্কেটের উন্নয়ন করতে হলে সরকার ও নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তাদের একসঙ্গে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। এ মার্কেটের বিস্তৃতির লক্ষ্যে এর ওপর নির্ধারিত করহার কমানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, বন্ড মার্কেট, ব্যাংক ব্যবস্থা এবং পুঁজিবাজারের মধ্যে সমন্বয় করলে তারল্য সংকট থাকবে না।