রহমত রহমান: পণ্য পরিবহন, বোঝাই আর খালাসে নেয়া হয়েছে বিল। সে বিল কেবল কোটি টাকা নয়, হাজার হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আদায় করা বিলের টাকা সঠিকভাবে দেখানো হয়নি আয়কর ফাইলে। এমনকি মালিকরাও নিজেদের ফাইলে সঠিকভাবে আয়ের টাকা দেখায়নি। আবার বিল থেকে ভ্যাট কর্তন করে জমা দেয়া হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক ৭১টি প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে এভাবে আয়কর ও ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু ফাঁকি নয়, বিপুল পরিমাণ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচারেরও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, ২০০৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেয়া হয়েছে। আর আয় গোপন করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোর করফাঁকি ও অর্থপাচার নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদক থেকে এনবিআরে পাঠানো হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, ৭১ প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা পরিচালনা করে। ব্যবসার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, শিপিং এজেন্ট, আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, স্থাপনাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিল আদায় করে এসব প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আদায় করা টাকা ও ব্যাংক লেনদেনের বেশিরভাগ রিটার্নে প্রদর্শন করা হয় না। আয়কর বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে তথ্য গোপন করা হয়, যার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আদায় করা টাকার বেশিরভাগ পাচার করা হয়। অভিযোগের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর করফাঁকি ও পাচারের তথ্যাদি সংযুক্ত করা হয়েছে।
৭১ প্রতিষ্ঠান যেভাবে বিল আদায় করে: অভিযোগে বলা হয়, বন্দরে ৩১টি শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর কাজ করে আসছে। এসব অপারেটর বন্দরের সিমেন্ট ক্লিনকার জেটি থেকে বহির্নোঙর, কুতুবদিয়া ও মাতারবাড়ী এলাকায় আগত জাহাজগুলোর আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের পণ্য খালাস এবং রপ্তানি পণ্য বোঝাইয়ের কাজ করে। শিপিং এজেন্ট ও আমদানিকারক তাদের নিয়োগ দেয়। নিয়োগ পাওয়া অপারেটর কাজ শেষে ‘বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং অ্যান্ড বার্থ অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন’ কর্তৃক নির্ধারিত হারে বিল নেই।
আরও বলা হয়, ৩১টি প্রতিষ্ঠান বার্ষিক ১২ কোটি মেট্রিক টন পণ্য বোঝাই ও খালাস করেছে। সে হিসেবে ২০০৭ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ১৪ বছরে প্রায় ১৫৬ কোটি মেট্রিক টন পণ্য বোঝাই ও খালাস করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, বিদেশ থেকে ৫০ হাজার টন খোলা সার বস্তা ভর্তি করে জাহাজ থেকে বহির্নোঙরে নেয়ার বিল করা হয় এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা (প্রতি টন ৩৩০ টাকা)। ৩১ প্রতিষ্ঠান বছরে ১২ কোটি মেট্রিক টন পণ্য খালাস করে। সে হিসেবে বছরে বিল আদায় করে প্রায় তিন হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। আর ১৪ বছরে আদায় করেছে ৫১ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। প্রতিটি অপারেটর বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ৫০ লাখ টাকা নিরাপত্তা জামানত দেয়। সে হিসাবে ৩১টি প্রতিষ্ঠানের জামানত রয়েছে ১০ কোটি টাকা। অথচ এ টাকা অপারেটরগুলো রিটার্নে প্রদর্শন করেনি।
অপরদিকে প্রতি অপারেটরের ২০টি গ্রাব, সাতটি পে-লোডার গাড়ি ও যন্ত্রপাতি রয়েছে। ২০ গ্রাবের মূল্য প্রায় চার কোটি (প্রতিটি ২০ লাখ) টাকা, সাতটি পে-লোডারের দাম দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা (প্রতিটি ৪০ লাখ) ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির দাম প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রতিটি অপারেটরের গ্রাব, পে-লোডার ও যন্ত্রপাতির দাম প্রায় ১০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অথচ অপারেটরগুলো গ্রাব, লোডার ও যন্ত্রপাতির ক্রয়ের টাকা রিটার্নে প্রদর্শন করেনি।
অভিযোগে বলা হয়, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর অ্যাসোসিয়েট ট্রেডার্স অ্যান্ড মেরিনার্স লি. ১৪ বছরে আদায় করেছে দুই হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। এই অপারেটরের সম্পদের পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকা। সে হিসেবে এ অপারেটরের মোট সম্পদ দুই হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। কিন্তু ১৪ বছরে এ অপারেটর আয়কর ফাঁকি দিয়েছে ৫১৬ কোটি টাকা। একইভাবে আকমল খান অ্যান্ড কোং আদায় করেছে দুই হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। সম্পদের পরিমাণ ২৭৫ কোটি টাকা। আদায়সহ প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদ দুই হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। ফাঁকি দিয়েছে ৫৬৩ কোটি টাকা। এএসএল স্টিভিউটর অ্যান্ড লজিস্টিক লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। সম্পদের পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। ফাঁকি দিয়েছে ৬৯৪ কোটি টাকা। এনসিএন্ট ট্রেডার্স লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৪২০ কোটি টাকা। সম্পদের পরিমাণ ১৫০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ দুই হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ফাঁকি দিয়েছে ৫১৪
কোটি টাকা। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল শিপিং করপোরেশন আদায় করেছে দুই হাজার ২০ কোটি টাকা। সম্পদের পরিমাণ ২১০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদের পরিমাণ দুই হাজার ২৩০ কোটি। ফাঁকি ৪৪৬ কোটি টাকা। বিএসটিসি শিপিং লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। সম্পদ ২১০ কোটি টাকা। আদায়সহ মোট সম্পদ তিন হাজার কোটি টাকা। ফাঁকি ৬০০ কোটি টাকা। ফিলিট ইন্টারন্যাশনাল লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। সম্পদ ৪৩০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ৩২০ কোটি টাকা। ফাঁকি দিয়েছে ৬৬৪ কোটি টাকা।
গ্রীন এন্টারপ্রাইজ লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। সম্পদ ৪৩০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ২৭০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৬৫৪ কোটি টাকা। গ্রেট বেঙ্গল এন্টারপ্রাইজ কোং আদায় করেছে দুই হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। সম্পদ ৩৭৫ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। ফাঁকি ৬৩৩ কোটি টাকা। এইচসি মেরিন লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৫১০ কোটি টাকা। সম্পদ ৩২০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ দুই হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৫৬৬ কোটি টাকা। হাজী ইদ্রিস অ্যান্ড সন্স লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সম্পদ ১৯০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ দুই হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৫৩৬ কোটি টাকা। এইচএস মেরিন এজেন্সি আদায় করেছে দুই হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। সম্পদ ২৫০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ দুই হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৫৭৬ কোটি টাকা। কেএম এজেন্সি আদায় করেছে তিন হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। সম্পদ ৩২০ কোটি। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৭৩২ কোটি টাকা। কেএস আবদুল হাকিম সন্স অ্যান্ড কোং আদায় করেছে তিন হাজার ২০ কোটি টাকা। সম্পদ ৩১০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদমূল্য তিন হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৬৬৬ কোটি টাকা। এমএ কালাম অ্যান্ড কোং লি. আদায় করেছে তিন হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। সম্পদ ৫৯০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ চার হাজার ১৫০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৮৩০ কোটি টাকা। মমতাজ শিপিং এজেন্সি আদায় করেছে ২০০ কোটি টাকা। সম্পদ ১৫০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ ৩৫০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৭০ কোটি টাকা। এমএ নাছির অ্যান্ড ব্রাদার্স আদায় করেছে দুই হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। সম্পদ ২০০ কোটি। আদায়সহ সম্পদ দুই হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৫৯৬ কোটি টাকা।
নবাব অ্যান্ড কোম্পানি আদায় করেছে তিন হাজার ২০ কোটি টাকা। সম্পদ ৪১০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৬৮৬ কোটি টাকা। ওসান এইড সার্ভিসেস লি. আদায় করেছে এক হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। সম্পদ ১৫০ কোটি। আদায়সহ সম্পদ দুই হাজার ৪৫ কোটি টাকা। ফাঁকি ৪০৯ কোটি টাকা। প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। সম্পদ ৪১০ কোটি। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ১৮০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৬৩৬ কোটি টাকা। প্যাসটিস করপোরেশন লি. আদায় করেছে তিন হাজার ১৫০ কোটি টাকা। সম্পদ ৩৮০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ৫৩০ কোটি। ফাঁকি ৭০৬ কোটি। সুফি অ্যান্ড ব্রাদার্স আদায় করেছে ২৩০ কোটি টাকা। সম্পদ ১৬০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ ৩৯০ কোটি। ফাঁকি ৭৮ কোটি টাকা। সী কোস্ট শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। সম্পদ ৫১০ কোটি। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ৪০০ কোটি। ফাঁকি ৬৮০ কোটি টাকা। সীকণ এন্টারপ্রাইজ লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। সম্পদ ৫১০ কোটি। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ২৯০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৬৫৮ কোটি টাকা। সী এন্টারপ্রাইজ প্রা. লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। সম্পদ ৪৬০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৬৬৮ কোটি। স্টিভিউডর ফ্রেন্ডস সিন্ডিকেট লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। সম্পদ ৪৩০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ২২০ কোটি। ফাঁকি ৬৪৪ কোটি টাকা। এমএসএ সার্ভিসেস লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। সম্পদ ৩১৮ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ২০৮ কোটি। ফাঁকি ৬৪১ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ট্রেডার্স আদায় করেছে দুই হাজার ৯১০ কোটি টাকা। সম্পদ ৪১১ কোটি। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ৩২১ কোটি টাকা। ফাঁকি ৬৬৪ কোটি টাকা। ইউনি ফ্রেন্ডস প্রা. লি. আদায় করেছে ২৮০ কোটি টাকা। সম্পদ ১৯০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ ৪৭০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৯৪ কোটি টাকা। সী-লিফট স্টিবিউডরিং সার্ভিসেস লি. আদায় করেছে তিন হাজার ২৩২ কোটি টাকা। সম্পদ ৫১০ কোটি। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ৭৪২ কোটি। ফাঁকি ৭৪৮ কোটি টাকা। আর এ চৌধুরী অ্যান্ড কোং লি. আদায় করেছে তিন হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। সম্পদ ৬১০ কোটি। আদায়সহ সম্পদ চার হাজার ৬০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৮১২ কোটি টাকা।
অপরদিকে বন্দরে পাঁচটি বার্থ অপারেটর (জেনারেল কার্গো) ১৪ বছরে ১৬৯ কোটি মেট্রিক টন পণ্য খালাস বাবদ আদায় করেছে ১৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাব, পে-লোডার ও যন্ত্রপাতির হিসাব রিটার্নে প্রদর্শন করেনি। এর মধ্যে এ ডব্লিউ খান অ্যান্ড কোং লি. আদায় করেছে তিন হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। সম্পদ ২৬০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ চার হাজার ৫০ কোটি। ফাঁকি দিয়েছে ৮১০ কোটি টাকা। ফোর জুয়েল স্টিভিউডরিং সিন্ডিকেট লি. আদায় করেছে তিন হাজার ৫২০ কোটি টাকা। সম্পদ ৫১০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ চার হাজার ৩০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৮০৬ কোটি টাকা। ইউনাইটেড ট্রেডিং কোম্পানি আদায় করেছে তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সম্পদ ৪১১ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ চার হাজার ২১১ কোটি টাকা। ফাঁকি ৮৪২ কোটি টাকা। পঞ্চরাগ উদয়ন সংস্থা লি. আদায় করেছে তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সম্পদ ৫১০ কোটি। আদায়সহ সম্পদ চার হাজার ৪১০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৮৮২ কোটি টাকা। রুহুল আমিন অ্যান্ড ব্রার্দাস আদায় করেছে তিন হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। সম্পদ ৫২০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ চার হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৮৭৪ কোটি টাকা।
এদিকে পাঁচটি বার্থ অপারেটর (কন্টেইনার) ১৪ বছরে পণ্য বোঝাই ও খালাস করেছে সাত কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন, যা থেকে বিল আদায় করেছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে বশির আহমদ এন্ড কোং লি. আদায় করেছে তিন হাজার ১২০ কোটি টাকা। সম্পদ ৩৮০ কোটি। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কর ফাঁকি দিয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিসেস লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। সম্পদ ৪৩১ কোটি টাকা। ফাঁকি ৬৪২ কোটি টাকা। এফ কিউ খান অ্যান্ড ব্রাদার্স লি. আদায় করেছে দুই হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। সম্পদ ৩৭২ কোটি টাকা। ফাঁকি দিয়েছে ৫৯০ কোটি টাকা। এমএইচ চৌধুরী লি. আদায় করেছে তিন হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। সম্পদ ৫৮৯ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ৯১৯ কোটি টাকা। ফাঁকি ৭৮৩ কোটি টাকা। ফজলী সন্স লি. আদায় করেছে তিন হাজার ২১০ কোটি টাকা। সম্পদ ৪৮০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। ফাঁকি ৭৩৮ কোটি টাকা।
অপরদিকে তিনটি টার্মিনাল অপারেটর (কন্টেইনার) ১৪ বছরে পণ্য বোঝাই ও খালাস করেছে ছয় কোটি ৫০ লাখ কন্টেইনার। সে অনুযায়ী বিল নেয়া হয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড আদায় করেছে ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সম্পদ রয়েছে ৫১০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদমূল্য ১৫ হাজার ২১০ কোটি টাকা। কর ফাঁকি দিয়েছে তিন হাজার ৪২ কোটি টাকা। এম এইচ চৌধুরী লি. আদায় করেছে ৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সম্পদ ৪৮০ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ আট হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ফাঁকি এক হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। ফজলী সন্স লি. আদায় করেছে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা। সম্পদ ২৭৫ কোটি টাকা। আদায়সহ সম্পদ তিন হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। ফাঁকি ৬৯৫ কোটি টাকা। অপরদিকে ২৭টি লাইটারেজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৪ বছরে নদীপথে পণ্য পরিবহন করেছে ১৬৯ কোটি মেট্রিন টন। সে হিসেবে বিল আদায় করেছে ৬৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী ২৭টি প্রতিষ্ঠান আদায় করা বিল ও সম্পদের ওপর মোট ২১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, ৭১ প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্যাংকে দুই হাজার ৩৩২টি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের রয়েছে ১০টি লাইটারেজ জাহাজ। প্রতিষ্ঠান মালিকরা তাদের স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনের নামে ১৪ বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা এসব টাকার বেশিরভাগ কর ফাঁকি দেয়া। পাচার করা টাকায় দুবাই, হংকং, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া ও কানাডায় কেনা হয়েছে বাড়ি, গাড়ি, পেট্রোল পাম্প, মার্কেট ও রিসোর্ট। এছাড়া প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা দেশের অভিজাত এলাকায় বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি, হোটেল, রিসোর্টে বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করেনি।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন সদস্য শেয়ার বিজকে বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও মালিকের ফাইল খতিয়ে দেখলে ফাঁকি বের হবে। তবে পাচার হওয়া অর্থ আমরা তো হিসাব করতে পারব না।
করফাঁকি ও পাচারের বিষয়ে বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং অ্যান্ড বার্থ অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফজলে ইকরাম চৌধুরী বলেন, ‘ট্যাক্স অফিস ও বন্দর ভবনে গিয়ে খোঁজ নেন আমরা কত টাকার বিল উত্তোলন করেছি। তাতেই উত্তর পেয়ে যাবেন।’