Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:15 pm

বন্দরের স্টোররেন্ট মওকুফের সময়সীমা বেড়েছে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিকারকদের কনটেইনারগুলোর স্টোর রেন্টের শতভাগ মওকুফ সুবিধা আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আজ আগের বাড়ানো মেয়াদ শেষ হওয়া কথা ছিল, কিন্তু সরকার সাধারণ ছুটির সময় আরও বাড়িয়েছে।

পাশাপাশি বর্তমান অচলাবস্থায় ব্যাংকের আর্থিক জোগানের অভাব, তারল্য সংকট, পরিবহন সংকট, শ্রমিক সংকট প্রভৃতি কারণে আমদানিকারকদের পক্ষে সময়মতো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আরও ১২ দিন কনটেইনারের স্টোর রেন্ট মওকুফের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি করে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বর্তমান অচলাবস্থায় ব্যাংকের আর্থিক জোগানের অভাব, তারল্য সংকট, পরিবহন সংকট, শ্রমিক সংকট প্রভৃতি কারণে আমদানিকারকদের পক্ষে সময়মতো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে বন্দরে কনটেইনার ও জাহাজজট সৃষ্টি হয়।

এ জট নিরসনের জন্য আমদানিকারক দ্রুত সময়ে কনটেইনার ডেলিভারি নেওয়া জন্য স্টোর রেন্ট মওকুফের সুবিধা পেয়েছিল, যা নিয়মানুুসারে আজ শেষ হওয়া কথা ছিল। কিন্তু গতকাল সরকার আবারও সাধারণ ছুটি বর্ধিত করে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত। বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবির পাশাপাশি সরকারি ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কনটেইনারগুলোর স্টোর রেন্টের শতভাগ মওকুফ সুবিধা আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল হক বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনাসহ সরকারি সাধারণ ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে চলমান কনটেইনারগুলোর স্টোর রেন্টের শতভাগ মওকুফ সুবিধাকে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে গত ২৬ মার্চের পর থেকে বর্ধিত সময়ের মধ্যে আসা কনটেইনারগুলো ডেলিভারি নিলে আমদানিকারকরা এ সুবিধা পাবেন। এ সময়ের মধ্যে ডেলিভারি নিতে ব্যর্থ হলে আইন অনুসারে চার্জ ধার্য হবে।

দ্য চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস-উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের স্টোর রেন্ট মওকুফের সময়সীমা ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করতে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এমপি’র প্রতি গত ৪ মে এক পত্রের মাধ্যমে আহ্বান জানিয়েছেন চেম্বার সভাপতি।

অপরদিকে দেশের পোশাকশিল্পের সংকটময় পরিস্থিতি উত্তরণে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যত দিন সরকারি ছুটি বা লকডাউন থাকবে, ততদিন চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার স্টোর রেন্ট মওকুফ করতে চিঠি দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে শনিবার (২ মে) লেখা চিঠিতে তিনি ৪ মে পর্যন্ত পোশাকশিল্পের আমদানি চালান খালাসে বন্দরের স্টোর রেন্ট ১০০ ভাগ মওকুফ করায় আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। এরই মধ্যে কিছু পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনপূর্বক আংশিকভাবে কারখানার অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ রয়েছে এবং বিদেশি সরবরাহ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদানি দলিলাদি অনেক প্রতিষ্ঠান পায়নি। ফলে পণ্য চালান খালাস করা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে দ্য চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, কনটেইনারগুলোর স্টোর রেন্ট শতভাগ মওকুফ করায় যে আমদানিকারকরা শিপমেন্টের অরিজিনাল ডকুমেন্ট ও ব্যাংক গ্যারান্টি কনফার্ম করতে পারছেন, তারা দ্রুতগতিতে ডেলিভারি নিচ্ছেন। এর ফলে বন্দরে আগের চেয়ে কনটেইনারজট অনেকাংশে কমেছে। বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় আমদানিকারকরা সময়মতো পণ্য ডেলিভারি নিতে পারছেন না।

তাই সরকার ঘোষিত আমদানিকৃত কনটেইনারগুলোর স্টোর রেন্ট শতভাগ মওকুফের তারিখ আগামী ১৬ মে তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত করায় আমদানিকারকরা ওই সময়ের মধ্যে সব ধরনের অরিজিনাল ডকুমেন্ট ও ব্যাংক গ্যারান্টির ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে পণ্য ডেলিভারি নিতে সক্ষম হবেন এবং চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ডেলিভারি স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসবে।

উল্লেখ্য, গতকাল বিকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমানায় মোট জাহাজ ছিল ৮৮টি। এর মধ্যে ৪৭টি জাহাজ থেকে কার্গো ও কনটেইনার খালাস করার কাজ চলছিল। আর ৪১টি জাহাজ থেকে কার্গো ও কনটেইনার খালাস হয়নি। এর মধ্যে ছিল কনটেইনার জাহাজ ২৫টি, অয়েল ট্যাংকার ছয়টি, সাধারণ কার্গো জাহাজ পাঁচটি, ক্লিংকার জাহাজ চারটি ও ফুড গেইন একটি, যেক্ষেত্রে গত ১ এপ্রিল বন্দরে মোট অলস বসে থাকা জাহাজের সংখ্যা ছিল ২৬টি। এর মধ্যে ছিল কনটেইনার জাহাজ ছয়টি, অয়েল ট্যাংকার ১১টি, সাধারণ কার্গো জাহাজ তিনটি, ক্লিংকার জাহাজ চারটি ও ফুড গেইন দুটি। এছাড়া গতকাল বন্দর ইয়ার্ডে মোট কনটেইনার ছিল ৪৭ হাজার ১০০ টিইইউএস। আর আমদানি ও রপ্তানিবাহী কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল পাঁচ হাজার ৫৩৮ টিইইউএস। একই সময়ে বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছিল তিন হাজার ৮২৫ টিইইউএস।