সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার পর গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল ইন্টারনেট সংযোগ। আর ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় সময়মতো পণ্যবাহী কনটেইনার ডেলিভারি নিতে পারেনি আমদানিকারকরা। অপরদিকে সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ করতে পারেনি রপ্তানিকারকরা। এতে স্বাভাবিক সময় তুলনায় কনটেইনার ভেলিভারি নিতে অতিরিক্ত ছয়দিন সময় লাগে।
ফলে অতিরিক্ত সময়ের জন্য আমদানিকারকদের গুনতে হচ্ছে জরিমানা। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী সূত্রে জানা যায়, শাটডাউনের ছয়দিন কনটেইনার ভেলিভারি নিতে পারেনি। ফলে অতিরিক্ত সময়ের জন্য আমদানিকারকদের গুনতে হচ্ছে জরিমানা। সাধারণত চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যের কনটেইনার চারদিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ পান আমদানিকারকরা। এরপর ২০ ফুট লম্বা সাইজের একটি কনটেইনারের জন্য প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ৬ মার্কিন ডলার স্টোর রেন্ট গুনতে হয়। তার পরবর্তী সপ্তাহ প্রতিদিন একই সাইজের কনটেইনারে ১২ ডলার এবং ২১ দিন থেকে প্রতিদিন ২৪ ডলার হিসেবে ভাড়া দিতে হয় আমদানিকারকদের।
একইভাবে ৪০ ফুট সাইজের কনটেইনারের ক্ষেত্রে এর দ্বিগুণ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। যেমন ৪ দিন পর থেকে পরবর্তী ৭ দিন ৪০ ফুট কনটেইনারে ১২ ডলার, এরপর ২১ দিন পর্যন্ত ২৪ ডলার, ২১ দিন পর থেকে ৪৮ ডলার স্টোর রেন্ট গুনতে হয়।
আমদানিকারকরা বলেন, এনবিআর নিয়ন্ত্রিত শুল্কায়ন সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুল্কায়ন ও পণ্য খালাসের কাজ করতে পারেনি কাস্টমস, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস, শিপিং এজেন্টস, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স ও আমদানি-রপ্তানিকারকরা। সেই ছয়দিন ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক আমদানিকারক বন্দর থেকে পণ্য খালাসের সব কাজ শেষ করেও পণ্য ডেলিভারি নিতে পারেননি। পক্ষান্তরে বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার পড়ে থাকায় নিয়ম অনুযায়ী স্টোর রেন্ট বা ডেমারেজ চার্জ যোগ হতে থাকে বন্দরের হিসেবের খাতায়। কিন্তু ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের প্রশ্নÑইন্টারনেট অচলের মাশুল কেন ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে? তাই ইন্টারনেট অচল থাকার সময়ে বন্দরের স্টোর রেন্ট মওকুফের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামের পোশাক খাতের অনেক ব্যবসায়ী ও খাতুনগঞ্জভিত্তিক আমদানিকারকরা বলেন, অনেক ব্যবসায়ী পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি করে সব শুল্ক ও কাগজপত্র সংগ্রহ করেও শুধু ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বন্দরের ভেতর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারেননি। এ দায় তো ব্যবসায়ীদের নয়। আগ্রহ থাকলেও পরিস্থিতির কারণে বন্দর থেকে পণ্য গ্রহণ করতে পারেননি। তাই বৃহৎ স্বার্থে ওই পাঁচ দিন যেন স্টোর রেন্ট মওকুফ করা দরকার।
বিজিএমইএ প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন ও শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানিয়েছি যেন ইন্টারনেট সংযোগ অচল থাকার সময় তারা কোনো প্রকার ডেমারেজ চার্জ ব্যবসায়ীদের ওপর আরোপ না করে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় শাটডাউনের দিনগুলোয় বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি অনেক কম ছিল।
স্বাভাবিকভাবে নির্দিষ্ট সময়ে কনটেইনার ডেলিভারি নিতে গেলে জরিমানা গুনতে হবে। এক্ষেত্রে বন্দরের জরিমানা মওকুফের সুযোগ নেই। কোনো আমদানিকারক বা ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বরাবর প্রতি আবেদন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় জরিমানা মওকুফ করতে পারে। এ বিষয়ে কোনো সরকারিভাবে নির্দেশনা এখনও আসেনি।
এ বিষয়ে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে আসা নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দুপুর সাড়ে ১২টায় বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে আলাপকালে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু কাস্টমস হাউস পুরোপুরি ডিজিটাল ব্যবস্থায় কার্যক্রম সম্পাদন করে। ফলে ইন্টারনেট অচল থাকায় কনটেইনার ডেলিভারি তেমন হয়নি। ফলে বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে অনেক বেশি কনটেইনার জমে যায়। এতে কোনো আমদানিকারক যদিও মনে করে তার অনেক ক্ষতি হয়েছে, সেই জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন করুক। আমরা জরিমানা মওকুফ করে দেব। কারণ বন্দর দেশকে সেবা দেয়, ব্যবসা করে না।