নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরে ফের দুই কনটেইনার মদের চালান জব্দ করেছে কাস্টম হাউস। গতকাল সোমবার বিকালে মদের চালানের দুটি কনটেইনার জব্দ করা হয়। এসব কনটেইনারের মধ্যে একটি নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি লিমিটেড, অন্যটি বাগেরহাটের মংলা ইপিজেডের ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের নামে চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে।
কাস্টম হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার উপকমিশনার সাইফুল হক বলেন, সব ধরনের কাগজপত্র জাল করে আমদানি করা হয়েছে এসব চালান। তার মধ্যে টেক্সচার্ড সুতা ঘোষণায় ২ জুলাই চীন থেকে ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের নামে কনটেইনারটি বাংলাদেশে আসে এবং পলিপ্রোপালিন আনাফ ঘোষণা ১২ জুলাই ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি লিমিটেড নামে কনটেইনারটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। আমাদের ধারণা বন্দরে আরও কিছু কনটেইনার থাকতে পারে।
তিনি বলেন, কাস্টম হাউসের এআইআর শাখা ও পোর্ট কন্ট্রোল ইউনিট চালান দুটির বিল অব ল্যান্ডিং (বিএল) ব্লক করেছিল। তবে চালান দুটিতে আমদানিকারক বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি। পরে কনটেইনার খুললে দুই কনটেইনারেই বিদেশি মদ পাওয়া যায়। এর আগে রোববার চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর নীলফামারী উত্তরা ইপিজেডের ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের নামে আরও একটি মদের কনটেইনার জব্দ করা হয়েছে। তার আগে শুক্রবার ভোরে নারায়ণগঞ্জ থেকে মদভর্তি দুটি কনটেইনার জব্দ করা হয়, যাতে প্রায় ২৫ কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আইপি জালিয়াতি করে আমদানি করা এই মদ আমদানি চক্রের অন্যতম হোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। রোববার ঢাকা বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অর্থাৎ সব মিলে চার দিনে মোট পাঁচ কনটেইনার মদ জব্দ করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
শুক্রবার দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে মদভর্তি দুটি কনটেইনারে এক হাজার ৩৩০ কার্টনে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩১ হাজার ৬২৫ দশমিক পাঁচ লিটার মদ পাওয়া গেছে, যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় চার কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এতে প্রায় ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার শুল্ককর ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছে।
অপরদিকে শুক্রবার জব্দ করা মদ আমদানি চক্রের অন্যতম হোতা আব্দুল আহাদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাব বলছে, গার্মেন্ট পণ্যের আড়ালে শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে ৩৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকার ৩৬ হাজার ৮১৬ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়েছে। অবৈধ মদের সবচেয়ে বড় চালান এটি। চক্রটি এর আগেও দুবাই থেকে তিনটি চালানে প্রায় ১৪ হাজার বোতল মদ এনেছে। এসব মদ তারা ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে সরবরাহ করত। করবিবার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মইন বলেন, শনিবার র্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জে আভিযান চালিয়ে পণ্যবাহী দুটি কনটেইনার জব্দসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেয়া তথ্যে চক্রের অন্যতম হোতা আব্দুল আহাদকে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন নাজমুল মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম। এছাড়া তাদের কাছ থেকে কোটি টাকা মূল্যের দেশি ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, এই মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা আহাদ এবং মিজানুর রহমান আশিক সম্পর্কে সহোদর এবং উভয়ের বাবা আজিজুল ইসলাম। তারা এক বছর ধরে এই অবৈধ কারবারের সঙ্গে জড়িত। তারা সিঅ্যান্ডএফের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে এই অবৈধ মাদক আমদানি কার্যক্রম করে থাকে। এই অবৈধ মাদক আমদানির ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন কোম্পানির কাগজপত্র ব্যবহার করে। চক্রটি দেশে টিভি ও গাড়ির পার্টস ব্যবসার আড়ালে অবৈধ মাদকদ্রব্য বিপণন নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। অবৈধ মাদক বিদেশ থেকে আনার পরে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, রাজধানীর বংশাল ও ওয়ারীতে ওয়্যারহাউসে রাখা হয়। পরে সুবিধাজনক সময়ে এসব অবৈধ মাদক বিপণন করে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে পরিবহনকৃত কনটেইনার থেকে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারে মদ জব্দ হওয়ার বিষয়ে অতিরিক্ত কমিশনার-১ আবু নুর রাশেদ আহমেদকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কাস্টম হাউস। ১০ দিনের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।