অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ: পদ্মা-মেঘনা ও যমুনা নদীর বিভিন্ন স্থানে পানি কমে যাওয়ায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে এ বন্দরে চট্টগ্রাম ও মংলা নৌ-রুটের পণ্যবাহী বড় জাহাজ ভিড়তে পারছে না। এতে এ রুটে জ্বালানি তেলবাহী কার্গো, সার, কয়লা, পাথর ও সিমেনন্টবোঝাই জাহাজগুলো বন্দরে যেতে পারছে না। এতে বন্দর জাহাজশূন্য হওয়ায় কর্মরত পাঁচ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
এদিকে বাঘাবাড়ী ঘাটে পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়তে না পেরে সেই জাহাজগুলো নগরবাড়ী ও পাটুরিয়া নৌবন্দরের অদূরে লাইটারেজের মাধ্যমে অর্ধেক মাল আনলোড করে পাবনার বেড়া, নগরবাড়ী ও যশোরের নওয়াপাড়া ঘাটে খালাস করছে।
গত শনিবার বিকালে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, বড় জাহাজ চলাচলের জন্য ১২ থেকে ১৫ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন হলেও বর্তমানে বড়াল নদীতে পানি আছে ছয় থেকে আট ফুট। এ কারণে চট্টগ্রাম, খুলনা ও মোংলাসহ দেশের বিভিন্ন নৌবন্দর থেকে কয়লা, সার, সিমেন্ট, তেলসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এ বন্দরে জাহাজ আসতে পারছে না। পানি কম থাকায় প্রায় ১৫ দিন ধরে জাহাজগুলো বন্দরে ভিড়তে না পারায় এ বন্দরে কর্মরত পাঁচ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
বাঘাবাড়ী নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া বলেন, নদীর পানি কমে যাওয়ায় মোল্লার চর, ব্যাটারির চর, পাটুরিয়া, নিকলি ও চর-নাকালিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ডুবোচর জেগে উঠেছে। ফলে পূর্ণ লোডের কারণে পণ্যবাহী জাহাজগুলোর বন্দরে আসা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে জাহাজের মাল বন্দরের অদূরে খালাস করতে বাধ্য হতে হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত নদী ড্রেজিং করতে তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নৌবন্দর শ্রমিক এজেন্ট আবুল সরকার বলেন, কোটি টাকা দিয়ে বাঘাবাড়ী ঘাট ইজারা নিয়েছি। নদীতে পানি কম থাকায় দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় জাহাজ আটকে যাওয়ায় লাইটারেজ জাহাজ ও কার্গোতে করে বন্দরে পণ্য আনতে হচ্ছে। এতে আথিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার সার, তেল, চাল, গমসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসা হয় এই বন্দর দিয়ে। এছাড়া যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম কোম্পানির তিনটি জ্বালানি তেলের ডিপোও রয়েছে এ বাঘাবাড়ী বন্দরে। বন্দরে জাহাজ ভিড়তে না পারায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের শ্রমিক আশরাফ, হোসেন, শুক্কুর আলী, মিন হাজুল ইসলাম ও বেলাল হোসেন বলেন, গত ৩৫ বছরেও এই বাঘাবাড়ী বন্দর জাহাজশূন্য হয়নি। নদীতে পানি না থাকায় প্রায় ১৫ দিন ধরে জাহাজ আসতে না পারায় প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিন কাজ করে সংসার চালাতে হয়। কিন্তু কাজ না থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি আমরা।
বাঘাবাড়ী বন্দরের বাফার গুদামের কর্মকর্তা হারুন আর রশিদ বলেন, এ বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ১৪ বাফার গুদামে ইরি-বোরো আবাদের জন্য আপৎকালীন সার মজুত রয়েছে। ফলে এ সমস্যায় সার সংকটের কোনো শঙ্কা নেই।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, এটা দ্বিতীয় শ্রেণির নৌবন্দর। নিয়ম অনুযায়ী এ বন্দরের চ্যানেলে সাত-আট ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলার কথা, কিন্তু সেখানে ১০-১২ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করলে সমস্যা হবেই। বন্দরটিকে প্রথম শ্রেণিতে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। এটি হলেই এ সমস্যা আর থাকবে না বলে তিনি জানান।