ডমিনিক্স রিয়েলটি (বিডি) লিমিটেডের উদ্যোক্তা লাপাত্তা

বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তুলছে ইস্টার্ন ব্যাংক

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামভিত্তিক কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের জামাতা এসএম শামীম ইকবাল। তিনি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানও ছিলেন। অদূরদর্শী প্রকল্প গ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব ও ব্যবসায়িক অনভিজ্ঞতায় ডুবেছে তার নিজের গড়া একাধিক প্রতিষ্ঠান। এতে অন্যান্য ব্যাংকের মতো খেলাপি হয়েছেন ইস্টার্ন ব্যাংকেও।

যদিও খেলাপি হওয়ার অনেক আগেই গোপনে তিনি ছেড়েছেন দেশ। তার মালিকানাধীন ডমিনিক্স রিয়েলটি (বিডি) লিমিটেডের কাছে ব্যাংকটির আগ্রাবাদ শাখার পাওনা ৩২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর এ পাওনা আদায়ে ব্যাংকটি লাপাত্তা ব্যবসায়ীর বন্ধকিতে থাকা সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, ডমিনিক্স রিয়েলটি (বিডি) লিমিটেড ব্যবসার প্রয়োজনে ইস্টার্ন ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা থেকে ২০১৮ সালে ঋণ সুবিধা নিয়েছিল। কিন্তু গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাংকটির পাওনা পরিশোধে একাধিকবার ব্যর্থ হয়। গত ৩১ মে চূড়ান্তভাবে ব্যাংকের খেলাপি তালিকায় নাম ওঠে কোম্পানিটির, যদিও এ ঋণের বিপরীতে বন্ধকি আছে গাজীপুরে ৩২৮ শতাংশ, সিলেটে ৩৯৯ শতাংশ, সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল ভাটিয়ারি চার একর ও একই এলাকায় ৯২ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম মহানগরের নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে সানম্যান বনন্ত অ্যাপার্টমেন্টে ২৭৫০ ও ২৭০০ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পাওনা আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এসব জমি, সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ও ফ্ল্যাট নিলামে বিক্রির জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী ২৩ জুলাই আগ্রাবাদ শাখায় নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এ নিলামে আগ্রহীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। অপরদিকে ডমিনিক্স রিয়েলটি (বিডি) লিমিটেডের কাছে ব্যাংক এশিয়া আগ্রাবাদ শাখার বকেয়া পাওনা সুদাসলে এক কোটি টাকা। এ পাওনা আদায়ে অর্থঋণ মামলা চলমান আছে।

শুধু ইস্টার্ন কিংবা ব্যাংক এশিয়ায় নয়, পদ্মা ব্যাংকের খেলাপির তালিকায়ও নাম আছে কোম্পানিটির। ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এসএম শামীম ইকবালের মালিকানাধীন এনএম ট্রেডিং করপোরেশন ঋণ সুবিধা নিয়েছিল। কিন্তু দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাংকটির পাওনা পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটি একাধিকবার ব্যর্থ হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্তভাবে ব্যাংকের খেলাপি তালিকায় নাম ওঠে। তার প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকটির খেলাপি পাওনার পরিমাণ ২৭ কোটি চার টাকা। আর পাওনার বিপরীতে সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল ভাটিয়ারি ৭০৮ শতাংশ ও বাঁশবাড়িয়া মৌজায় ৬৬ শতাংশ এবং কক্সবাজারের ইনানীতে ১২২ শতাংশ বন্ধকিতে থাকা জমি নিলামে বিক্রির চেষ্টা করে পদ্মা ব্যাংক। তবে ক্রেতা না থাকায় আর তা বিক্রি হয়নি।

সূত্রমতে, এসএম শামীম ইকবাল শ্বশুরের বদান্যতায় ২০১৪ সালে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কেডিএস এক্সেসরিজের চেয়ারম্যান ছিলেন। একই সময়ে তিনি ডমিনিক্স এমআই লিমিটেড, ডমিনিক্স রিয়েলটি (বিডি) লিমিটেড, ভরটেক্স মাল্টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, স্কাই সিকিউরিটিজ এবং গউস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। এছাড়া কেডিএস টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের পরিচালকও ছিলেন। এ সময় নানা প্রতিষ্ঠানের পদ-পদবিকে ব্যবহার করে নিজের নামে এনএম ট্রেডিং করপোরেশন, ডমিনিক্স এমআই লিমিটেড, হংকংভিত্তিক ডমিনিক্স গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, স্পার্ক ট্রেডিং কোম্পানি, রূপকথা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এর মধ্যে হংকংভিত্তিক ডমিনিক্স গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং হংকংভিত্তিক আরেক প্রতিষ্ঠান স্পার্ক ট্রেডিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে তার অদূরদর্শী প্রকল্প গ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব ও ব্যবসায়িক অনভিজ্ঞতায় ডুবেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো স্থান পায় ব্যাংক এশিয়া, পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডসহ বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি তালিকায়। এসব পাওনা পরিশোধ না করে সাম্প্রতিক সময়ে গোপনে সস্ত্রীক তিনি পালিয়ে যান কানাডায়। আর ঋণের টাকা ফেরত পেতে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক প্রত্যাখ্যান ও অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। বাকিরাও মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।  

এ বিষয়ে জানতে এসএম শামীম ইকবালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এ প্রসঙ্গে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের চট্টগ্রাম অঞ্চলের করপোরেট ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান এবং এসইভিপি ইফতেকার উদ্দিন চৌধূরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এসএম শামীম ইকবালের মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান ডমিনিক্স রিয়েলটি (বিডি) লিমিটেড আমাদের খেলাপি গ্রাহক।’ তবে এর চেয়ে বেশি কিছু মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে আলাপকালে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের খাতুনগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের জামাতা ব্যবসায়ী এসএম শামীম ইকবালের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এনএম ট্রেডিং করপোরেশন আমাদের খেলাপি গ্রাহক। প্রচলিত আইন ও নিয়ম-নীতির মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এর মধ্যে পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশে খেলাপি গ্রাহকের বন্ধকিতে থাকা জমি নিলামে বিক্রির চেষ্টা করেছিলাম। যদিও তার বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যানের দায়ে এনআই অ্যাক্টে মামলা চলমান আছে।’

তিনি আরও বলেন, এই খেলাপি গ্রাহক তো দেশে নেই। আর তার ব্যবসা-বাণিজ্য তো সব বন্ধ। তার প্রতিনিধির মাধ্যমে রি-শিডিউলের জন্য প্রস্তাব দিলেও তা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১