কোনো দম্পতি কোনো জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি ব্যবহার ছাড়া পূর্ণ এক বছর একসঙ্গে বসবাসের পরও সন্তান ধারণে ব্যর্থ হলে তা বন্ধ্যত্ব (ইনফার্টিলিটি) সমস্যা হিসেবে গণ্য। বন্ধ্যত্ব দুই ধরনের: ক. প্রাইমারি, অর্থাৎ যাদের কখনও সন্তান হয়নি; খ. সেকেন্ডারি, অর্থাৎ যাদের আগে গর্ভধারণ হয়েছে, কিন্তু পরে আর হচ্ছে না।
বন্ধ্যত্বের ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে নারী, ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষ, বাকি ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের কোনো সমস্যা থাকে।
নারীর বন্ধ্যত্বের কারণ: পিসিও বা পলিসিস্টিক ওভারি ও এ সমস্যায় নারীদের প্রতি মাসে যে ডিম্বাণু ওভারি থেকে নিঃসৃত হওয়ার কথা, তা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
হরমোনজনিত কারণ। যেমন থাইরয়েডের সমস্যা, প্রোল্যাকটিন হরমোনের সমস্যা ইত্যাদি। বয়স, মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশগত প্রভাব, ক্যানসারসহ নানা কারণে ডিম্বাণুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়া।
বিশেষ কিছু রোগ। যেমন এন্ডোমেট্রিওসিস ও চকলেট সিস্ট থাকা। কিছু যৌনবাহিত রোগের কারণেও মেয়েদের প্রজনন অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। কিছু জন্মগত ত্রুটি থাকলে। যেমন-জরায়ু না থাকা, অপরিপক্ব থাকা, জন্মগতভাবে ডিম্বাণু না থাকা বা কম থাকা, ডিম্বাশয় ছোট থাকা ইত্যাদি।
পুরুষের বন্ধ্যত্বের কারণ: বীর্যে সমস্যা। এজোস্পার্মিয়া বা শুক্রাণুর অনুপস্থিতি; যা দুই কারণে হতে পারে। যেমন উৎপাদনই হচ্ছে না বা শুক্রাণু আসার পথে কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ওলিগোস্পার্মিয়া; যাতে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া। অচল শুক্রাণু ও ত্রুটিযুক্ত শুক্রাণু অধিক থাকা। পুরুষের প্রধান হরমোন (যেমন টেস্টোস্টেরন) সঠিক মাত্রায় না থাকা। ডায়াবেটিস। ধূমপান। ছোটবেলায় মাম্পস বা মিজেলসের প্রভাব। প্রজনন অঙ্গে কোনো আঘাত বা অস্ত্রোপচার। যৌনবাহিত অসুখ বা যক্ষ্মা।
প্রতিকার: নারী ও পুরুষ উভয়েরই কিছু ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। যেমন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। শর্করা কমিয়ে প্রোটিন ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খেতে হবে। ফাস্টফুড খাওয়া বাদ দিতে হবে। স্থূলতা সন্তান ধারণের অন্তরায়। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। রাতে আগে ঘুমানো, সকালে আগে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় স্বামী ও স্ত্রী উভয়েরই পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। এ নিয়ে দ্বিধা থাকলে চলবে না।
ডা. নাজিয়া সুলতানা
ল্যাপারোস্কপিক সার্জন ও ইনফার্টিলিটি স্পেশালিস্ট
সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অবস অ্যান্ড গাইনি), ইমপালস হাসপাতাল, ঢাকা