Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 8:49 pm

বন্ধ ঘোষণা দিলেও চলছে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র

ইসমাইল আলী: বিদ্যুৎ খাতে লোকসান কমানো ও ভর্তুকির চাপ সামাল দিতে গত ১৭ জুলাই ঘোষণা দেয়া হয় দেশের সব ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। পরের দিন থেকে এ ঘোষণা কার্যকর হয়। পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘণ্টাব্যাপী লোডশেডিং শুরু করা হয়। তবে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা বেশিদিন কার্যকর থাকেনি। ২০ দিন পরই আগের অবস্থান থেকে সরে আসে সরকার। চালু করা হয় ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলো।

যদিও লোডশেডিং পরিস্থিতির সে সময়ের কোনো উন্নতি হয়নি। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমলেও কয়েক দিন ধরে আবার তা বেড়েছে। এছাড়া ভেঙে পড়েছে ঘণ্টাব্যাপী লোডশেডিংয়ের শিডিউল।

সূত্র জানায়, পেট্রোবাংলা গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় গ্যাসচালিত কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে বর্তমানে। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় সময়মতো তহবিল ছাড় না করায় তেল আমদানির বিল ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়েকটি বন্ধ করে দিয়েছেন বেসরকারি মালিকরা। ফলে বাধ্য হয়ে চালাতে হচ্ছে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে পিডিবির লোকসান বেড়ে গেছে ২৫ শতাংশ।

পিডিবির তথ্যমতে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ডিজেলচালিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবগুলোই চালু ছিল। তবে সাতটি ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ ছিল। আরও কয়েকটি কেন্দ্র তেলের অভাবে আংশিক বন্ধ রাখা

 হয়। পাশাপাশি গ্যাস সংকটের কারণে ২০টি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

এ প্রসঙ্গে পিডিবির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, গ্যাসচালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে চালাতে ২৪ সেপ্টেম্বর গ্যাস দরকার ছিল দুই হাজার ২৫২ এমএমসিএফ। তবে ওইদিন পেট্রোবাংলা থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হয় ৯৮৪ এমএমসিএফ। তাই গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বড় অংশ বন্ধ ছিল। আর ফার্নেস অয়েলচালিত বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর নিজেরাই তেল আমদানি করে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় গত মার্চ থেকে নিয়মিত ভর্তুকির অর্থ ছাড় করছে না। ফলে তেল আমদানির বিলও কোম্পানিগুলোকে নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি ক্যাপাসিটি চার্জও বকেয়া পড়েছে। এতে কয়েকটি কোম্পানি তেল আমদানি বন্ধ রেখেছে। ফলে ফার্নেস অয়েলচালিত কয়েকটি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।

তারা আরও জানান, সাধারণত ফার্নেস অয়েলের তুলনায় ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় তেল বেশি লাগে। এছাড়া ফার্নেসের চেয়ে ডিজেলের দামও বেশি। ফলে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানোয় লোকসান কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। এছাড়া ডিজেলে গড় উৎপাদন ব্যয় ফার্নেস অয়েলের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে এগুলো বোঝা হয়ে উঠেছে।

এদিকে কয়েক বছর ধরেই ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় নিয়মিত লোকসান দিচ্ছে পিডিবি। গত অর্থবছর এ খাতে প্রায় তিন হাজার ১২৫ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে সংস্থাটি। সে অর্থবছর ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলো গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল ৪০ টাকা ১০ পয়সা। আর বিদ্যুতের গড় বিক্রিমূল্য পাঁচ টাকা তিন পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে পিডিবির লোকসান হয়েছে ৩৫ টাকার বেশি।

পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছর ডিজেলচালিত ছয় বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পিডিবি মোট বিদ্যুৎ কিনেছে ৮৭ কোটি ৭৬ লাখ ইউনিট। এতে মোট ব্যয় হয় তিন হাজার ৫১৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর ওই বিদ্যুতের বিক্রয় মূল্য ৩৯৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ছয় কেন্দ্রের মোট উৎপাদন ব্যয়ের ৮৮ দশমিক ৮১ শতাংশই লোকসান ছিল পিডিবির।

জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ঘাটতি মেটাতে চার বছর আগে ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। দ্রুত উৎপাদন শুরুর জন্য এসব কেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। তবে পরে চাহিদা কম থাকায় এগুলোয় উৎপাদন করা হতো কম। যদিও গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় গত অর্থবছর এগুলোয় উৎপাদন কিছুটা বাড়ানো হয়। তবে ভর্তুকি কমাতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৮ জুলাই থেকে এগুলো বন্ধ রাখা হয়।

তিনি আরও বলেন, পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আবার চালু করা হয়েছে। তবে এসব কেন্দ্রের মেয়াদ আর এক বছর আছে। চলতি অর্থবছর কেন্দ্রগুলোর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এতে পিডিবির ব্যয় অনেকটাই সাশ্রয় হবে।