## ৪টি বিল অব এন্ট্রিতে ১০৩ টন ফেব্রিকস আমদানি
## রপ্তানি না জরে সব ফেব্রিকস খোলাবাজারে বিক্রি
## রাজস্ব ফাঁকি দুই কোটি ২২ লাখ টাকা
রহমত রহমান: পোশাক উৎপাদনের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাপড় (ফেব্রিকস) আমদানি করা হয় তাও এক-দুই কেজি নয়, প্রায় এক লাখ তিন হাজার কেজি (১০৩ টন)। কিন্তু কোনো পণ্য উৎপাদনও হয়নি, রপ্তানিও হয়নি। রপ্তানির হদিস করতে গিয়ে দেখা গেল প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। বন্ড সুবিধা নিয়ে এমন ভয়াবহ জালিয়াতি করেছে গাজীপুরের এআরএইচ নিট কম্পোজিট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠানটির বন্ড সুবিধার এমন অপব্যবহারের রহস্য উদ্ঘাটন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) প্রতিবেদন দিয়েছে। এনবিআরের নির্দেশে সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসেবে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করেছে। সম্প্রতি এ নোটিস জারি করা হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআরের এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ২০১৪ প্রতিষ্ঠানটি বন্ড লাইসেন্স পেয়েছে। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান কীভাবে বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির জন্য ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) পেয়েছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। বন্ড কমিশনারেট প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর নিরীক্ষা করেছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন করেন তিনি।
এনবিআর সূত্র জানায়, গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার প্রতিষ্ঠান এআরএইচ নিট কম্পোজিট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালে বন্ড লাইসেন্স পায়। প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্স নিয়ে কাঁচামাল (ফেব্রিকস) আমদানি করে আসছে, কিন্তু পণ্য রপ্তানি করা হয়নি। বছরের পর বছর এসব কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এনবিআরে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তা খতিয়ে দেখতে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টমস গোয়েন্দা নিরীক্ষা করে এনবিআরকে প্রতিবেদন দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদের আমদানির তথ্য পর্যালোচনা করে অনিয়ম উদ্ঘাটন করা হয়। তাতে দেখা যায়, এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটি চারটি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে এক লাখ দুই হাজার ৯৬৬ কেজি বিভিন্ন ধরনের ফেব্রিকস আমদানি করে। কিন্তু কাস্টমস গোয়েন্দা অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড ও কাস্টমস ওয়েবসাইট যাচাই করে দেখতে পায়, প্রতিষ্ঠানটি কোনো পণ্য রপ্তানি করেনি। এছাড়া সরেজমিনে পরিদর্শনে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাহলে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান কীভাবে বছরের পর বছর বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করেছে? এছাড়া কোনো পণ্য রপ্তানি করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি শুল্ককর ফাঁকি দিতেই এগুলো খোলাবাজারে বিক্রি করে আসছে বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা।
কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে প্রতিষ্ঠানটির তথ্যাদি যাচাই করে দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি অনুমতি ছাড়াই অন্যত্র চলে গেছে। তবে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে চিঠি, ই-মেইল ও মোবাইলের মাধ্যমে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের কারও হদিস পাওয়া যায়নি। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব নেই, পণ্য রপ্তানি করা হয়নি, সেহেতু প্রতিষ্ঠানটি শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে এসব কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে বলে ধারণা করছেন কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। চারটি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে আমদানিকৃত এক লাখ দুই হাজার ৯৬৬ কেজি ফেব্রিক্সের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য দুই কোটি ৫৭ লাখ ৩ হাজার ৯৯৩ টাকা, যাতে শুল্ককরের পরিমাণ দুই কোটি ২২ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৯ টাকা।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ২৭ আগস্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুন অর রশিদ বরাবর কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে। বন্ড কমিশনার মো. শওকাত হোসেনের সই করা নোটিসে ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুন অর রশিদকে কয়েক দিন ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদেবার্তা পাঠালেও জবাব দেননি। তবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. হিরন আলী হাওলাদার ফেব্রিকস খোলাবাজারে বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন। শেয়ার বিজকে তিনি বলেন, ‘আমরা যে কাঁচামাল আমদানি করেছি, তা দিয়ে পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করেছি।’ কবে পণ্য রপ্তানি করেছেনÑএ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেখতে হবে কোন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। বন্ডের বিষয়টি এমডি দেখেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানাব।’ এরপর ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।