Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 7:13 pm

বন্ধ হচ্ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল পরিবর্তন আসছে ব্যবস্থাপনায়

আয়নাল হোসেন: কয়েক দিন ধরেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, লোকসানের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর উৎপাদন বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এমন গুঞ্জনের ভিত্তিতে চিনিকলগুলো বন্ধ না করার দাবিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধনও পালিত হয়েছে। তবে চিনিকলগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, এগুলো বন্ধ করে দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে চিনিকলের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসছে। এমনকি চিনিকলের ব্যবস্থাপনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানকেও দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) সূত্রে জানা গেছে।

বিএসএফআইসি সূত্রে জানা যায়, তিনটি চিনিকল নতুন আঙ্গিকে চালু করার বিষয়ে জাপান ও থাইল্যান্ড সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয় দেড় বছর আগে। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার পর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। তবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে কভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে সমঝোতা স্মারকের কার্র্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি চিনিকলের মালিকানায় যৌথভাবে বাংলাদেশ, জাপান ও থাইল্যান্ড থাকবে। বাংলাদেশ সরকার শুধু জমি দেবে। সেখানে নতুন কারখানা স্থাপন, যন্ত্রপাতি ও পরিচালনা পর্ষদ থাকবে বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণে। আর এটি করা গেলে লোকসান কাটিয়ে চিনিকলগুলো মুনাফা করতে সক্ষম হবে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান সনৎ কুমার সাহা শেয়ার বিজকে বলেন, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধ হচ্ছে না। এগুলো পরিচালনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে টাকা চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, জাপান ও থাইল্যান্ডের যৌথ পরিচালনায় দেশের তিনটি চিনিকল নতুন করে চালু করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতিও হয়েছে। কিন্তু করোনায় কার্যক্রম পিছিয়ে গেছে। তবে বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

চেয়ারম্যান আরও জানান, দেশের চিনিকলগুলো দীর্ঘদিন ধরে লোসনান গুনছে। তবে শুধুু চিনি উৎপাদন করে এগুলোকে টেকসই করা সম্ভব নয়। এজন্য নানা ধরনের উপজাত পণ্য (বাই প্রোডাক্ট) উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উপজাত পণ্য উৎপাদনে দু-তিন বছর সময় লাগবে। অন্যান্য মিল পরিচালনার জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী খোঁজা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

গত শনিবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই, বরং এগুলোর আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বছরে চিনির চাহিদা রয়েছে ১৮ লাখ টনের মতো। দেশের মোট চাহিদার মাত্র চার শতাংশ চিনি উৎপাদন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত কলগুলো। তবে দেশীয় মিলগুলো ইক্ষু থেকে চিনি উৎপাদন করছে। এই চিনি স্বাস্থ্যসম্মত এবং খেতে অনেক মিষ্টি। আর বেসরকারি চিনিকলগুলো মূলত বিদেশ থেকে আমদানি করা চিনির কাঁচামাল এনে পরিশোধন করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলো বন্ধ হলে একক নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে বেসরকারি মিলারদের হাতে। তখন চিনির মূল্য ওঠানামা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।

বিএসএফআইসি সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে সংস্থার দায়দেনা রয়েছে সাত হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। ইক্ষু সরবরাহকারী কৃষকদের বকেয়া রয়েছে ১৬৭ কোটি টাকা। অর্থাভাবে সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি শেষে গ্র্যাচ্যুইটিসহ অন্যান্য বকেয়া পাওনা ৩৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। তবে মিলগুলো যাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে পুনরুদ্যমে চালু হতে পারে, সেজন্য সরকার কাজ করছে। মিলগুলোর অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দূর করা গেলে এই মিলগুলো লোকসানের পরিবর্তে আয়ের মুখ দেখবে বলে মনে করছেন বিএসএফআইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ও অব্যবস্থপনার কারণে বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সিবিএ নেতাদের দোর্দণ্ড প্রতাপ ও অনিয়মের কারণে মিলগুলো কখনও নিজের আয়ে চলতে পারেনি। বাজারে দেশীয় চিনির ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিপণনে সংস্থার কর্মকর্তাদের গাফলতির কারণে চিনিশিল্প বছরের পর বছর লোকসান দিচ্ছে।