Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:29 am

বন্ধ হচ্ছে যানবাহনের থার্ড পার্টি বিমা

পলাশ শরিফ: শেষ পর্যন্ত বন্ধ হচ্ছে যানবাহনের তৃতীয় পক্ষ (থার্ড পার্টি) ইন্স্যুরেন্স। আইনি বাধ্যবাধকতা পরিপালন, যানবাহন মালিকদের দায় এড়ানোর প্রবণতা বন্ধ, দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ না পাওয়া এবং ওই বিমা নিয়ে সমালোচনার মুখে এ নিয়ে নতুন করে ভাবছেন বিমা খাতের দায়িত্বশীলরা। এজন্য থার্ড পার্টি বিমা বন্ধ করে ফার্স্ট পার্টি বিমা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনায় যানবাহনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সঙ্গে বিমা কোম্পানিগুলোর আয়ও বাড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যমান মোটরযান আইনে কোনো মোটরগাড়ির বিমা না করে রাস্তায় চালানোর সুযোগ নেই। বিমা ছাড়া কেউ গাড়ি রাস্তায় নামালে ট্রাফিক পুলিশের মামলা-জরিমানাসহ নানা শাস্তির মুখে পড়তে হয়। তাই সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোতে যানবাহনের বিমার ব্যবস্থা রয়েছে। মোটরযানের দু’বছরের বিমা ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রথম পক্ষ (ফার্¯¡ পার্টি) বিমা। প্রথম পক্ষ বিমা কাভারেজের আওতায় থাকা কোনো যানবাহন দুর্ঘটনাকবলিত হলে বিমা কোম্পানি থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এজন্য যানবাহনের মূল্যে তিন শতাংশ হারে বিমা প্রিমিয়াম দিতে হয়। একইভাবে ‘থার্ড পার্টি’ বিমাও রয়েছে। ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচে ওই বিমা করা যায়। এটি আদতে একটি কাগজ ছাড়া কিছু নয়, এতে কেউই ক্ষতিপূরণ পায় না। শুধু ট্রাফিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলার জন্যই ওই ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে প্রতি বছর বড় অঙ্কের প্রিমিয়াম হারাচ্ছে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘রাস্তায় গাড়ি নামাতে হলে আইনি কিছু বাধ্যবাধকতা মানতে হয়। এখানে থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স দায়সারা গোছের একটি ব্যবস্থা। এ ধরনের বিমার কোনো ভিত্তি নেই। এতে শুধু পুলিশের ঝামেলাটা মেটানো যায়। দুর্ঘটনা হলে কেউই কোনো ক্ষতিপূরণ পায় না। তাই সম্পদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ওই বিমা বন্ধ করা দরকার। সেজন্য আমরা থার্ড পার্টি বিমা তুলে দিয়ে ফার্স্ট পার্টি বিমা চালুর পক্ষে মত দিয়েছি। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাও আমাদের সঙ্গে একমত। থাড পার্টি বিমা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হলে প্রিমিয়াম আয় বাড়বে। সেই সঙ্গে সম্পদও সুরক্ষিত থাকবে।’
বিমা খাতের দায়িত্বশীলদের মতে, থার্ড পার্টি বিমার ব্যবস্থা থাকায় যানবাহন মালিকরা নামমাত্র খরচে ওই বিমা করেন। ব্যাংক ঋণ দিয়ে নেওয়া নতুন কিংবা দামি গাড়ির মালিকরা ফার্¯¡ পার্টি বিমা করছেন, এর বাইরে থার্ড পার্টি বিমা বাড়ছে। পরিবহন মালিক-ব্যবসায়ীরা দায়সারাভাবে থার্ড পার্টি বিমা করায় মোটর বিমার প্রিমিয়াম আয় কমছে। ২০১৮ সালে বেসরকারি সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো মোটর বিমা থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় করেছে। যানবাহনের থার্ড পার্টি বিমার সুযোগ না থাকলে এ খাতের মোট প্রিমিয়াম আয় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত।
বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের (বিজিআইসি) মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ সাইফুদ্দিন চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘থার্ড পার্টি বিমার বদলে ফার্স্ট পার্টি বিমা বাধ্যতামূলক করা নিঃসন্দেহে ভালো একটি উদ্যোগ। সেক্ষেত্রে যানবাহনের ফার্¯¡ পার্টি বিমা বাড়বে। এতে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সঙ্গে যানবাহন মালিকরাও দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে পারবেন। তবে ফার্¯¡ পার্টি বিমার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াতে হলে প্রিমিয়াম হার সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। তাহলে মোটরযানের বিমার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।’
উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালের বাংলাদেশ মোটরযান অর্ডিন্যান্সে থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কিন্তু আইনে থাকলেও বাংলাদেশে ওই বিমার বিপরীতে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার নজির কম, যে কারণে ২০১৮ সালে প্রণীত ‘সড়ক পরিবহন’ আইনে থার্ড পার্টি বিমার বিধানটি বিলোপ করা হয়েছে। এর বদলে যাবনবাহনের ফার্স্ট পার্টি বিমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ওই আইনে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য পৃথক ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের কথাও বলা হয়েছে।