নতুন নিয়মে আইপিওর শেয়ার বণ্টন

বন্ধ হয়ে যাবে বিপুলসংখ্যক বিও অ্যাকাউন্ট

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: গত বছরের নভেম্বর মাসে পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন প্রায় দেড় লাখ বিনিয়োগকারী। বহুজাতিক কোম্পানির রবির তালিকাভুক্তির খবরে বাড়ে উল্লেখযোগ্য হারে বিও অ্যাকাউন্ট। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে তা নেমে এসেছে ৪৪ হাজারে। লটারি প্রথা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে আইপিওর শেয়ার বণ্টনের খবরেই ভাটা পড়েছে বিও অ্যাকাউন্ট খোলায়।

আইপিওর শেয়ার পেতে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ থাকতে হবেÑএমন শর্তের কারণে লাখ লাখ বিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বিএসইসি মনে করছে, সবার জন্য আইপিওর শেয়ার এটা ভালো সিদ্ধান্ত। এতে সব বিনিয়োগকারী উপকৃত হবেন। যে বিওগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, তা অপ্রয়োজনীয় অ্যাকাউন্ট। কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ ভিন্ন ভিন্ন নামে এসব বিও খুলেছেন। তাদের জন্য যারা প্রকৃত বিনিয়োগকারী, তারা আইপিওর শেয়ার পান না। তাই সবার জন্য আইপিও শেয়ার বরাদ্দ হলে তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই উপকৃত হবেন।

সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে লটারি প্রথা উঠিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। সে অনুযায়ী বিনিয়োগকারীরা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আবেদন করলে সবাই শেয়ার পাবেন। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে ন্যূনতম বাজার মূল্যে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। এমন বিধান রেখে আইপিওর সংশোধনী চূড়ান্ত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিদ্যমান লটারি ব্যবস্থার পরিবর্তে আনুপাতিক হারে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হবে।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আইপিওতে আবেদনের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা (বাজার মূল্যে) বিনিয়োগ থাকতে হবে। আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা বা এর গুণীতক হারে আবেদন করতে হবে।

এছাড়া কমিশন বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বিডিং ও প্রসপেক্টাস প্রকাশের জন্য বিদ্যমান দুই দফায় সম্মতিপত্র দেয়ার পরিবর্তে উভয়ের জন্য একসঙ্গে সম্মতিপত্র প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের এসব সিদ্ধান্ত আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।

যদিও বিষয়টির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন অনেকে। তাদের মতে, শর্ত জুড়ে দেয়ার ফলে যারা সামান্য পুঁজি নিয়ে আইপিওতে আবেদনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসতে যাচ্ছেন তারা নিরুৎসাহিত হবেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, এ বিষয়টিতে আমি ভিন্নমত পোষণ করছি। পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন আছে কি না আমার জানা নেই। আমার মতে, আগের নিয়মই ঠিক ছিল।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর শেষে পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৫২ হাজার ১৬৮টি। নভেম্বর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ আট হাজার ৮৯২টি। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে প্রায় ৪৪ হাজার। এর মধ্যে একক অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১৬ লাখ ২৯ হাজার ৩২৫টি। এছাড়া ৯ লাখ আট হাজার ৯৩৮টি যৌথ এবং কোম্পানির বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১৩ হাজার ৮৩৫টি।

স্মরণকালের (২০১০ সালের) ভয়াবহ ধসের পর আর স্বরূপে ফিরতে পারেনি পুঁজিবাজার। মাঝেমধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আবারও পতনের ধাক্কা লেগেছে বাজারে। ফলে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যার ধারাবাহিক ধাক্কা লেগেছে বিও অ্যাকাউন্টে। গত ছয় বছরে নবায়ন না করায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৯ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট। বর্তমানে বাজারচিত্র বদলে যাওয়ায় আবারও পুঁজিবাজারে ফিরছেন বিনিয়োগকারীরা। নতুন নিয়মের কারণে চলতি বছর বিপুলসংখ্যক বিও ঝরে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিয়মানুযায়ী, জুনে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়।

এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুনে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময় বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০