সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বেসরকারি খাতের ১২টি ফ্র্যাকসনেশন প্লান্ট মানহীন জ্বালানি উৎপাদনের অভিযোগে প্রায় ১৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এসব প্লান্টের অব্যবহৃত সক্ষমতা ব্যবহার করার জন্য আবারও চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এ কারণে দেশের ডিজেলের চাহিদা বেশি থাকায় ডিজেল রিচড (ডিজেল সমৃদ্ধ) কনডেনসেট আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আর আমদানিকৃত ডিজেল রিচড বন্ধ থাকা ১২টি প্লান্টের মাধ্যমে পরিশোধন করে বাজারে সরবরাহ করা হবে। এতে বন্ধ থাকা বেসরকারি রিফাইনারিগুলো ফের উৎপাদনে আসার সুযোগ পাবে।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, দেশের ১৪টি বেসরকারি এবং ৭টি সরকারি কনডেনসেট ফ্র্যাকসনেশন প্লান্ট থেকে সরবরাহকৃত কনডেনসেটের বিপরীতে অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিন নিত বিপিসি। দেশের চাহিদার সব পেট্রোল সংগ্রহ করা হতো এ ২১ প্লান্ট থেকে। কিন্তু বেশিরভাগ কনডেনসেট ফ্র্যাকসনেশন প্লান্ট বিএসটিআইয়ের মান অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ করতে পারত না। এ কারণে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় পেট্রোল উৎপাদনকারী ১২ ননসিআরইউ (ক্যাটালেটিক রিফর্মিং ইউনিট) প্লান্টকে কনডেনসেট বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে সেই ১২ প্লান্টকে কনডেনসেট বরাদ্দ বন্ধ করে দেয় বিপিসি। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে সুপার রিফাইনারি লিমিটেড, অ্যাকোয়া মিনারেল টারপেনটাইন অ্যান্ড সলভেন্টস প্লান্টস লিমিটেড, পিএইচপি পেট্রো রিফাইনারি লিমিটেড, সিনথেটিক রেজিন প্রোডাক্টস (প্রা.) লিমিটেড, জেবি রিফাইনারি লিমিটেড, ইউনিভার্সেল রিফাইনারি (প্রা.) লিমিটেড, রূপসা ট্যাংক টার্মিনালস অ্যান্ড রিফাইনারি লিমিটেড, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেড, লার্ক পেট্রোলিয়াম কোম্পানি লিমিটেড, গোল্ডেন কনডেনসেট অয়েল রিফাইনারি ফ্যাক্টরি লিমিটেড, চৌধুরী রিফাইনারি লিমিটেড এবং কার্বন হোল্ডিংস লিমিটেড। আর ১২টি ফ্র্যাকসনেশন প্লান্টের জন্য ডিজেল রিচ কনডেনসেট আমদানি ও মজুদের বিষয়টি পর্যালোচনা করতে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল), এসএওসিএল এবং তিন তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে বিপিসি। এ বিষয়ে সম্প্রতি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে চিঠিও দিয়েছে বিপিসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্লান্ট মালিকদের সংগঠন পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পিআরএবি) বন্ধ থাকা ফ্রাকসনেশন প্লান্টগুলো চালুর বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেনদরবারের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (অপারেশন) আহ্বায়ক করে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ফ্র্যাকসনেশন প্লান্টগুলোয় আমদানিকৃত ডিজেল রিচ সরবরাহের জন্যও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি বিভাগ।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে পাঠানো বিপিসির পত্র সূত্রে জানা যায়, ইস্টার্ন রিফাইনারিতে সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন কনডেনসেট ধারণ ক্ষমতার একটি ট্যাংক আছে। আর এশিয়াটিক স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের তিনটি ট্যাংকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন আমদানিকৃত ডিজেল রিচড কনডেনসেট মজুদ করে রাখার সক্ষমতা আছে। সব মিলিয়ে সাড়ে ২০ হাজার মেট্রিক টন মজুদ সক্ষমতা রয়েছে। এমন সক্ষমতা বিবেচনায় ১৫ হাজার টন ডিজেল রিচড কনডেনসেট আমদানি করা যেতে পারে বলে জ্বালানি বিভাগকে অবহিত করে বিপিসি। এসব ডিজেল রিচড কনডেনসেট জিটুজি (সরকার টু সরকার) পর্যায়ে আমদানির প্রস্তাব করা হয় চিঠিতে। পাশাপাশি বন্ধ থাকা ফ্র্যাকসনেশন প্লান্ট ডিজেল রিচড কনডেনসেট দিয়ে বিএসটিআই এবং বিপিসির নির্ধারিত মান অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে পারলে চাহিদা অনুযায়ী তা বিপিসি গ্রহণ করবে বলে মতামত ব্যক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে বিপিসির উপমহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোরশেদ হোসাইন আজাদ বলেন, বন্ধ ফ্র্যাকসনেশন প্লান্টগুলো চালু করার বিষয়ে বিপিসি একটি সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের জমা দেয়া হয়েছে। এসব প্লান্টের জন্য ডিজেল রিচ কনডেনসেট আমদানি ও মজুদের বিষয়টি পর্যালোচনা করতে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল), এসএওসিএল এবং তিন তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর কনডেনসেট আমদানির বিষয়টি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে বিপিসি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।