বন্ধ ১৫ বিদ্যুৎকেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা ১,৩৩৫ কোটি টাকা!

ইসমাইল আলী: ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট রিপাওয়ারিং তথা সংস্কারকাজ শুরু হয় ২০২০ সালে, যা এখনও শেষ হয়নি। এতে গত অর্থবছর কেন্দ্রটি প্রায় পুরো সময় বন্ধ ছিল। উল্টো পরীক্ষামূলক পরিচালনার জন্য ২৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটিতে বাইরে থেকে আট লাখ ৬২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। একই ধরনের চিত্র ছিল শাহজিবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে (সিসিপিপি)। কেন্দ্রটিতে বাইরে থেকে ৯ লাখ ৭১ হাজার ৭৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মালিকানাধীন উৎপাদন বন্ধ থাকা এমনই ১৫টি কেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছে শেয়ার বিজ। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ৯টিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ঋণাত্মক। বাকি ছয়টিতে উৎপাদন ছিল শূন্য। তবে এসব কেন্দ্রের পেছনে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় এবং স্থায়ী ব্যয় (কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, উৎসব বোনাস প্রভৃতি) বহন করতে হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে পিডিবির গত অর্থবছর প্রায় এক হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা গচ্চা গেছে।

বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও শাহজিবাজার ৩৩০ সিসিপিপির রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করতে হয়েছে ২২ কোটি ৯২ লাখ টাকার বেশি। আর কেন্দ্রটির স্থায়ী ব্যয় ছিল ৪০৫ কোটি আট লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পেছনে পিডিবিকে ব্যয় করতে হয়েছে ৪২৮ কোটি টাকা, যার পুরোটাই গচ্চা গেছে। অর্থাৎ এ কেন্দ্রটিতে গড় ঋণাত্মক ব্যয় দাঁড়ায় চার হাজার ৪০৫ টাকা।

একইভাবে ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করতে হয়েছে এক কোটি ২৮ লাখ টাকার বেশি। আর কেন্দ্রটির স্থায়ী ব্যয় ছিল ৪১৮ কোটি ৪০ টাকা। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পেছনে পিডিবিকে ব্যয় করতে হয়েছে ৪১৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ওই কেন্দ্রটিতে গড় ঋণাত্মক ব্যয় দাঁড়ায় চার হাজার ৮৬৫ টাকা ৯০ পয়সা।

ভেড়ামারা পাওয়ার স্টেশনে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ৭৩ হাজার ৬০৯ ইউনিট। এ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে ২০ কোটি ১০ লাখ টাকা। এতে গড় ঋণাত্মক ব্যয় পড়ে দুই হাজার ৭৩০ টাকা ৮৬ পয়সা। ১১৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্লান্টে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ছয় লাখ ৩৪ হাজার ২৮১ ইউনিট। বন্ধ এ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে ১১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ঋণাত্মক ব্যয় পড়ে এক হাজার ৮৩৪ টাকা সাত পয়সা।

হরিপুরে নির্মিত ২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার স্পেশাল বিজনেস ইউনিট (এসইউবি) বরাবরের মতোই বন্ধ ছিল গত অর্থবছর। তবে এ কেন্দ্রটিতে

বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় দুই লাখ ৭৯ হাজার ৮৫১ ইউনিট। বন্ধ এ কেন্দ্রে গত অর্থবছর পিডিবির গচ্চা গেছে ২৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ঋণাত্মক ব্যয় পড়ে ৮৯৬ টাকা ৭০ পয়সা। শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬১২ ইউনিট। বন্ধ এ কেন্দ্রের পেছনে পিডিবির গচ্চা গেছে ৫৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ঋণাত্মক ব্যয় পড়ে ৬২৯ টাকা ৩৯ পয়সা।

সিরাজগঞ্জ বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র পরীক্ষামূলক পরিচালনায় বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়েছে ২৫ হাজার ৩১৭ ইউনিট। দুই মেগাওয়াট সক্ষমতার এ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে এক কোটি ৪৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ঋণাত্মক ব্যয় পড়েছে ৫৯০ টাকা ১১ পয়সা। শাহজিবাজার ১০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি সচল রাখতে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়েছে ৯ লাখ ৯৬ হাজার ৪০২ ইউনিট। এ কেন্দ্রের পেছনে পিডিবির গচ্চা গেছে ৫৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ঋণাত্মক ব্যয় পড়েছে ৫৮০ টাকা ২৮ পয়সা।

বন্ধ থাকা বরিশাল গ্যাস টারবাইন পাওয়ার প্লান্টে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৭ ইউনিট। এ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে আট কোটি ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ঋণাত্মক ব্যয় পড়েছে ৪৫৬ টাকা ৪০ পয়সা। সব মিলিয়ে ঋণাত্মক উৎপাদন হওয়া ৯ কেন্দ্রে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়েছে ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার ৯৫১ কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর এ ৯ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে এক হাজার ৩০৬ কোটি ২২ লাখ টাকা।

এদিকে ঘোড়াশাল প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল গত অর্থবছর। এ কেন্দ্রের জন্য পিডিবির স্থায়ী ব্যয় ছিল ১৬৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা, যার পুরোটাই গচ্চা গেছে। একইভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকা শিকলবাহা পাওয়ার স্টেশনের জন্য স্থায়ী ব্যয় ছিল ১৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা, যা গচ্চা গেছে। এছাড়া ঢাকার ডিজিডি কেন্দ্রে গচ্চা গেছে পাঁচ কোটি ৬২ লাখ টাকা, কুতুবদিয়া ডিজেল জেনারেটর কেন্দ্রে পাঁচ কোটি টাকা, সন্দ্বীপ ডিজেল জেনারেটরে ৪৪ লাখ টাকা এবং সোনাগাজী বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে গেছে ৩৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বন্ধ ছয় কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে ১৯৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০