Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:10 pm

বন্যায় কুড়িগ্রামে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে

প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম:কুড়িগ্রামে সব নদনদীর পানি কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলার প্রায় ৬২ হাজার পানিবন্দি মানুষ রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকটে ভুগছেন। 

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন (পাউবো) বোর্ডের কার্যালয় থেকে গতকাল শনিবার সকালে জানানো হয়েছে, জেলার দুধকুমার নদীর পানি ৩৬ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি ১৯ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কমেছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি।

পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন স্থায়ী হবে। এরপর পানি নেমে যাবে। দুধকুমার এবং ধরলা নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জেলার ৭৬ ইউনিয়নের মধ্যে ৪৫টি বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে ১৮৫টি গ্রামের ১৬১ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

তিনি বলেন, এ ছাড়া নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এক হাজার ৬৬০টি আর পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১৪ হাজার ৬০টি। ফলে মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ৮৮০ জন। নদীভাঙনে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পানিবন্দি কয়েকজন জানিয়েছেন, নদনদীর পানি কমলেও তাদের ঘরবাড়ি থেকে এখনও পানি সরেনি। ফলে ৪-৫ দিন ধরে ঠিকমতো তারা রান্না করতে পারছেন না। জ্বালানি সংকটের পাশাপাশি তীব্র হয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট।

গবাদিপশু নিয়েও মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। অনেকে উঁচু জায়গায় গরু-ছাগল রেখেছেন। কিন্তু গোখাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। প্রকট হয়েছে স্যানিটেশন সমস্যাও। জরুরি ভিত্তিতে এসব এলাকায় শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানির প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন তারা।

এদিকে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন হয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়ন যাওয়ার একমাত্র সড়কে এখন থৈ থৈ পানি। রাস্তায় চলছে নৌকা। এ অবস্থা অনেক জায়গায়ই দেখা গেছে। 

সদর উপজেলা পাঁচগাছি ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের শাহেদ আলী ও আহাদ আলী জানান, পাঁচ দিন ধরে তাদের ঘরবাড়িতে পানি। ধানের বীজতলা, পটোল ও সবজি ক্ষেত এখন বুক সমান পানির নিচে।

গ্রামের চলাচলের একমাত্র রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এখন নৌকা। কিন্তু সবার নৌকা সুবিধা না থাকায় তাদের চলাচলেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

কদমতলা গ্রামের হযরত আলী সাংবাদিকদের বলেন, পানি ঘরে ঢুকে পড়ায় খাট তলিয়ে গেছে। রান্নার চুলা পানির নিচে। ঘরে চাল থাকলেও আগুন জ্বালানোর কোনো উপায় নেই। ফলে খেয়ে না খেয়ে দিনরাত পার করতে হচ্ছে।’

 কুড়িগামের ডিসি মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘এরই মধ্যে ৬৮ মেট্রিক টন চাল উপজেলাগুলোয় উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের কাছে ৫৮২ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকা ও এক হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুত রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, আমরা বন্যার্তদের তালিকা করছি, তালিকা মোতাবেক উপ-বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। গতকাল চিলমারী, সদর ও নাগেশ্বরীর কয়েকটি বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন বলে জানান তিনি।