উজানের পানি ও অতিবৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা বন্যায় আক্রান্ত। বসতবাড়ি, গবাদি পশু ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ২৯ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এক হাজার ৫৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে ৭৫ হাজার মানুষ। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বহু দুর্গম এলাকার প্রকৃত চিত্র এখনও পাওয়া যায়নি। এদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আগামী দুদিন অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীর মানুষ এমন বিধ্বংসী বন্যা আর দেখেনি। বসতবাড়ি ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আমরা আশা করি, সরকার এ বিষয়ে সচেতন আছে। বন্যাদুর্গতদের খাদ্য, চিকিৎসাসামগ্রী ও ত্রাণ পাঠানো হবে। সর্বাগ্রে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যায় আশ্রয়হীনদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এগিয়ে এসেছে ছাত্রসমাজ। বন্যার্তদের সহায়তায় অক্লান্ত পরিশ্রম করছে সবাই। বানভাসি মানুষ অভাবে, অর্ধাহারে ও অনাহারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে দিন যাপন করছে। এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে নাগরিকদেরও। কবে নাগাদ বন্যার পানি সরে যায়, সেটিও নিশ্চিত নয়। সামর্থ্য অনুসারে বন্যাদুর্গতদের অর্থ, ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যেতে পারে। সাহায্য-সহযোগিতা যেন লোকদেখানো বা ফটোসেশনের জন্য না হয়।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য অর্থ তহবিল সংগ্রহ, সাহায্য-সহযোগিতা ও বিতরণের সময় স্থানীয় প্রশাসন, উন্নয়নকর্মী বা স্বেচ্ছাসেবী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিকে অর্থবহ করতে হবে। সহায়তা পাওয়ার উপযোগীদের সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাজে সহযোগিতা ও সমন্বয় করতে হবে। কেউ একাধিকবার পাবে আবার কেউ বঞ্চিত হবে, এমন যেন না হয়।
দুঃখজনক বিষয় হলো, বন্যার ক্ষেত্রে আমরা প্রতিবছরই অভিজ্ঞতা অর্জন করি, কিন্তু সাধারণ মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হয় না। যেহেতু বন্যা প্রতি বছরই হয়, সেহেতু বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সাফল্য থাকার কথা। আমাদের অভিজ্ঞতা ও মোকাবিলায় নেয়া পদক্ষেপ অন্য দেশগুলোর গ্রহণ করার কথা! কিন্তু প্রতি বছরই আমরা শিখছি।
প্রশ্ন হচ্ছেÑপ্রতি বছর দেশে বন্যা হলেও বন্যা মোকাবিলায় কেন আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকে না? সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই বন্যার সময় ‘পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রয়েছে; বন্যায় আক্রান্ত এলাকায় ত্রাণের অভাব নেই’ প্রভৃতি বললেও বন্যার্তদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। এসব মানুষের জন্য শুধু চালই যথেষ্ট নয়। বিশুদ্ধ খাবার পানি, শিশুখাদ্য, ওরস্যালাইনসহ জরুরি ওষুধ-পথ্যও প্রয়োজন। বন্যাদুর্গতদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া প্রত্যেক নাগরিকের সামাজিক, মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব।