বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় সংস্কারে উদ্যোগ নিন

নদী আমাদের কৃষি, যোগাযোগ, সভ্যতা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির অপরিহার্য অনুষঙ্গ, এটি নতুন করে বলার অবকাশ নেই। নিজের জীবনধারণের প্রধান উপাদান দিয়েও মানুষের উপকার করে নদী। ‘পরোপকার’ কবিতায় রজনীকান্ত সেন প্রথমেই লিখেছেন নদীর কথাÑ‘নদী কভু পান নাহি করে নিজ জল।’ শিশুদের পরোপকারে অনুপ্রাণিত করতে কবিতাটি একসময় পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছিল। কালের বিবর্তনে নদীর ভূমিকা বদলেছে, নদী এখন সব কেড়ে নেয়। প্রতি বছরের মতো এবারও উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে দেশের বিস্তীর্ণ এলকায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছে।

গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘বন্যায় দুই হাজার ৭৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানা যায়, সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ১১ জেলায় দুই হাজার ৭৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, আসবাবপত্র, বই-পুস্তকসহ অন্যান্য জিনিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন হবে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ বাজেট সমন্বয় করা হবে। মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘সাম্প্রতিক অকস্মাৎ বন্যায় প্রাথমিক শিক্ষা সেক্টরে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং করণীয়’ সংক্রান্ত সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

আমরা আশা করি, বন্যার্তদের মধ্যে সময়মতো ত্রাণ পৌঁছে দেয়া এবং বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহ করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বন্যার পানি চলে যাওয়ার পর ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা রোগ দেখা দেয়। এজন্য খাওয়ার স্যালাইনসহ অন্যান্য ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিলীন হওয়া বিদ্যালয়গুলোর আসবাবপত্র ও ভবন যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করতে হবে। এত বিদ্যালয় পুনর্নির্মাণ করা বেশ সময়সাপেক্ষ। তবুও এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে যেন ছেদ না পড়ে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রতি বছরই আমাদের দেশে নদীভাঙন ও বন্যায় বিপুল ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা, ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয় রাষ্ট্র। বন্যার সময় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো অবশ্যই প্রথম ও প্রধান কাজ। বন্যা মোকাবিলায় আমাদের অভিজ্ঞতা কম নয়। প্রতি বছরই আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জন করি। কিন্তু বন্যা-পরবর্তী সময়ে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না।

আঞ্চলিক ও স্থানীয় অতিবৃষ্টি ও ভৌত অনেক কারণই বন্যা হওয়ার জন্য দায়ী। এবারের বন্যায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র দায় এড়াতে পারে না। তবে আমাদের নিজেদের সীমাবদ্ধতা, লোভ ও উদাসীনতার দায় অন্যের ওপর চাপানো ঠিক হবে না। অপরিকল্পিতভাবে নদীতীরে স্থাপনা নির্মাণ ও দখল-দূষণ করে নদীকে যারা আক্রান্ত করছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। মুষ্টিমেয় ভূমিদস্যুর লোভের মাশুল কেন দেবে রাষ্ট্র, কেন তাদের অবৈধ স্বার্থের শিকার হবে সাধারণ মানুষ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০