বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেটবাসীর সুরক্ষায় উদ্যোগ নিন

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের দেশের আবহাওয়া অনবরত বদলে যাচ্ছে। ফলে কৃষিক্ষেত্রে নানা রকম ফসলের সময়মতো উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের কৃষির গতি-প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে মারাত্মকভাবে। অসময়ে টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হলে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ বড় বিপদে পড়েন।

গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিলেটে তিন নদীর বাঁধ ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আবহমানকাল ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে মানুষ একপ্রকার অসহায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হন কৃষক। সিলেটে বন্যায় বিপর্যস্ত ১৩ লাখ মানুষ, সুনামগঞ্জেও বাড়ছে দুর্ভোগ। গত ১২ মে থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবং ভারতের মেঘালয় ও আসাম প্রদেশে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার সব নদীর পানি কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকায় আগাম বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট নগরীর একাংশ ছাড়াও আগাম বন্যায় জেলার কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। সিলেটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জেলা প্রশাসকের কাছে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলাকে ‘দুর্গত অঞ্চল’ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে। যদিও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তারা বলেছেন, পরিস্থিতি এখনও ‘দুর্গত অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণার মতো হয়নি।

‘দুর্গত অঞ্চল’ ঘোষিত হওয়ার মতো অবস্থা না হলেও ওই এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানি, খাবার প্রভৃতি নিয়ে বিপাকে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বেশি গুরুত্ব পাওয়ায় অসময়ের বন্যা কম গুরুত্ব পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোনোভাবে এটি এড়িয়ে গেলে বন্যার শিকার হওয়া এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসবা প্রতিষ্ঠান ও মাঠে-প্রান্তরে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। পানি জমে থাকলে বাস্তাঘাটেরও বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিতে পারে।

ভেঙে যাওয়া বাঁধসংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বাঁধ ভাঙার খবর প্রচার করেছে। সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য মসজিদের মাইকে বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত চেষ্টায় কতটা সতর্ক থাকা যায়! এ অবস্থায় জরুরি ওষুধ, খাদ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও সরকারি ত্রাণ সহায়তা বাড়ানো দরকার। স্থানীয় প্রশাসনকে সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারি বাড়াতে হবে।

পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি প্রভৃতি খবরে যাতে ঢল ও বন্যার প্রকৃত তথ্য চাপা পড়ে না যায়, সেজন্য বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রকে নিত্য তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। আমাদের অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে। সেচ মৌসুমে এ নদীগুলোয় পানি থাকে না। আবার বর্ষাকালে উজানের পানির চাপে দুই তীর প্লাবিত হয়। বন্যা, নদীভাঙন, শাসন, ব্যবস্থাপনা ও নগর বন্যা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০