নিজস্ব প্রতিবেদক : সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪২ লাখ মানুষ। দক্ষিণ এশিয়ায় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বন্যার চিত্র তুলে ধরে এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে ইউরোপিয়ান কমিশনের ইমারজেন্সি রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার। এতে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল ও মিয়ানমারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বলা হয়েছে, ভারতে এ পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯২ লাখ ৩৩ হাজার ৭০৫ জন মানুষ। মারা গেছেন ৬৭১ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা ভেসে গেছে ৫৯ হাজার ২১৩টি ঘরবাড়ি। নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৭২১ জনকে।
বাংলাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪২ লাখ ৪১ হাজার ৬২৮ জন। মারা গেছেন ৯৩ জন। যদিও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে বাংলাদেশে ৪১ জন মারা গেছে বলে জানানো হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা এবং নিরাপদে কতজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে সে তথ্য দেওয়া হয়নি।
জুনের শেষের দিকে শুরু হওয়া প্রথমবারের বন্যার পানি নেমে যায় জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে। মাঝে চার দিনের বিরতি দিয়ে দ্বিতীয়বার আবার বন্যা আসে গত ১৩ জুলাই। এতে দেশের প্রায় ৩০ জেলার নি¤œাঞ্চল কয়েকবার করে প্লাবিত হয়। এখনও কোথাও কোথাও পানি বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে বন্যা।
সরকারি হিসাব মতে, দেশের বিভিন্ন জেলায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে জামালপুরে ১৫ জন, লালমনিরহাটে একজন, সুনামগঞ্জে তিনজন, সিলেটে একজন, কুড়িগ্রামে ৯ জন, টাঙ্গাইলে চারজন, মানিকগঞ্জে দুজন, মুন্সীগঞ্জে একজন, গাইবান্ধায় একজন, নওগাঁয় দুজন এবং সিরাজগঞ্জে দুজন মারা গেছেন।
গতকাল বুধবার বন্যাকবলিত জেলা প্রশাসনগুলো থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে এ পরিসংখ্যান দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় জানায়, ৩১টি জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের জন্য এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৭১০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর এ পর্যন্ত সাত হাজার ৬৩০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং বিতরণ করা হয়েছে দুই কোটি চার লাখ ৪৫ হাজার ২০০ টাকা। শিশুখাদ্য সহায়ক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮২ লাখ টাকা এবং এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। গোখাদ্য ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং বিতরণের পরিমাণ ৭৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার এবং বিতরণ করা হয়েছে ৯০ হাজার ৮১২ প্যাকেট।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য ঢেউটিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩০০ বান্ডিল এবং বিতরণ করা হয়েছে ১০০ বান্ডিল, গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরি বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯ লাখ টাকা এবং বিতরণ করা হয়েছে তিন লাখ টাকা।
মন্ত্রণালয় জানায়, বন্যাকবলিত উপজেলার সংখ্যা ১৫৪টি এবং ইউনিয়নের সংখ্যা ৯১৭টি। পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১০ লাখ ২১ হাজার ৮৩৪টি এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোক সংখ্যা ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৮ জন।
বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এক হাজার ৫৯০টি। এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত লোক সংখ্যা ৮৮ হাজার ২৯৪ জন। আশ্রয়কেন্দ্রে আনা গবাদি পশুর সংখ্যা ৭৫ হাজার ৮৫৮টি। বন্যাকবলিত জেলাগুলো এ পর্যন্ত মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে ৯০১টি এবং বর্তমানে চালু আছে ৩৮৫টি।