গণমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকার বন্যার্তদের অহায়ত্বের কথা এসেছে। শেয়ার বিজে গতকাল ‘বন্যার ক্ষতচিহ্ন: একের পর এক ভেঙে পড়েছে মাটির ঘর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের মিরসরাই প্রতিনিধি জানান, ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখন ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। একের পর ভেঙে পড়েছে মাটির ঘর। কীভাবে নতুন করে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই অনেকের। এ অঞ্চলে গত ৭০ বছরেও এমন পানি দেখেনি মানুষ। তবে ভেঙে যাওয়া ঘরে চাপা পড়ে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। মাটির ঘরের অস্তিত্ব নেই। এসব ঘরের মালিকেরা বেশিরভাগ দরিদ্র। তাদের চলতে কষ্ট হয়। তার ওপর মাথা গোঁজার ঠাঁই চলে যাওয়ায় দুচোখে অন্ধকার দেখছেন তারা।
এর বাইরে বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর বড় অঞ্চলও দীর্ঘদিন জলমগ্ন। অনেককে বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাড়ি। বাড়ি ফিরলে তারা দেখবেন ঘরবাড়ি আর বাসযোগ্য নেইÑযারা অন্যত্র যাননি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারাও। বসতঘর নতুন করে নির্মাণ করতে হবে, কিংবা মেরামত করতে হবে। এদিকে সব হারিয়েছেন তারা। ফসল ক্ষেতে পুকুরে মাছ নেই, গৃহপালিত পশুপাখি নেই। খামারের গরু-মুরগি ভেসে গেছে বানের জলে। দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বাইরে নলকূপ ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানাও নতুন করে সংস্কার করতে হবে। এসব ক্ষতি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুষিয়ে আনা সাধারণ নিম্ন আয়ের ও সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে অসম্ভবই বটে। তাই বন্যার্তদের ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি-বেসরকারি বহুমুখী সহযোগিতা প্রয়োজন। বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল।
সরকারের উচিত হবে এখন থেকেই গৃহহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে সমন্বিত নীতি-পরিকল্পনা নেয়া। ক্ষতিগ্রস্তদের একটি অংশকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেয়ার বিষয় ভাবতে হবে। কোন এলাকায় কতগুলো ঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে এবং কতগুলো আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে, তার তালিকা করা প্রয়োজন। যাদের ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের ঘর তৈরি করে দিতে হবে। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর পুনর্নিমাণে সহায়তা করতে হবে। এ লক্ষ্যে সব এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এর আগে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর সহায়তা বিতরণে নানাভাবে অনিয়ম হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশে বাড়ি থাকতেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিয়েছেন অনেকে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত জরুরি ত্রাণ-তৎপরতা ও বন্যাদুর্গতদের মধ্যে যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। জরুরি তহবিল গঠনে সংশ্লিষ্ট খাতে এনজিওগুলোকে সম্পৃক্ত করা। একইসঙ্গে সব কাজে জবাবদিহি নিশ্চিত করা।