প্রতিনিধি, চাঁদপুর: চাঁদপুরে বন্যা এবং অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে ছয় উপজেলায় সড়ক ও জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, বন্যায় জেলায় ১৯২টি সড়ক ও ৪৪টি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ খাতে সম্ভাব্য ক্ষতি প্রায় ৪০ কোটি টাকা। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। আর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বন্যায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৮৬ কোটি ৬৬ লাখ ২২ হাজার টাকা। এছাড়া বন্যা ও জলাবদ্ধতায় জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৪৭ হাজার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যাদুর্গত শাহরাস্তি, কচুয়া ও হাজীগঞ্জ উপজেলার যেসব গ্রামীণ পাকা সড়কে পানি উঠেছিল, পানি নেমে যাওযার পর সেখানে ভাঙনের চিহ্ন ফুটে উঠছে। সদর, হাইমচর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলারও অধিকাংশ গ্রামীণ পাকা সড়ক দীর্ঘ একমাস পানির নিচে ছিল। ফলে সড়কগুলোর পাশের মাটি নরম হয়ে ভেঙে পড়ছে। সড়কের পাশে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলায় রোপা আউশ পানিতে নিচে তলিয়ে রয়েছে। কয়েকটি মাঠে রোপা আউশ দেখা গেলেও ধানের গোড়া পচে নুয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান কবির বলেন, ‘এবারের বন্যায় কচুয়া, শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ এবং অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে ফরিদগঞ্জ, সদর ও হাইমচর উপজেলায় ১৯২ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১২টি, হাইমচরে ১০টি, হাজীগঞ্জ ৪৫টি, কচুয়ায় ২২টি, শাহরাস্তিতে ৫৩টি ও ফরিদগঞ্জে ৫০টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ছয় উপজেলায় ৪৪টি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ কচুয়া উপজেলার আশরাফপুর ইউনিয়নের পিপলকরা গ্রামের কৃষক শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘বানের পানিতে রাস্তার পাশাপাশি আমাদের ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। গর্ত হওয়ার কারণে সড়কে যানবাহন চলাচল এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বেশি।’
শাহরাস্তি উপজেলার উনকিলা গ্রামের মনির হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বানের পানিতে বহু সড়ক তলিয়ে গেছে। এসব সড়ক ভেঙে এখন বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। তবে কিছু সড়ক আগ থেকে ভাঙা ছিল। এখন আরও বেড়েছে।’
সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ঢালীরঘাট-ফরক্কাবাদ সড়কের বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম খান বলছিলেন, ‘টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সড়ক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি মাটি নরম হয়ে বড় বড় গাছ উল্টে পড়েছে। একটি গাছ উল্টে আমার ঘরের ওপরে পড়ে। প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও গাছটি কেউ কেটে সরিয়ে নেয়নি।’ ফরিদগঞ্জ উপজেলার মানিকরাজ গ্রামের মোক্তার হোসেন বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন অংশ ভাঙন দেখা দিয়েছে। সড়কের পাশের অংশগুলো বেশি ভেঙেছে। কিছু এলাকায় গাছ উল্টে সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।’
বন্যার পানি এখনও পুরোপুরি নামেনি এবং জলাবদ্ধতাও রয়েছে জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান কবির বলেন, ‘আমরা গ্রামীণ সড়ক ও কালভার্টের ক্ষতির পরিমাণ এখনও চূড়ান্ত করিনি। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছি। এই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে আমরা এসব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও কালভার্ট মেরামতের সম্ভব্য ব্যয় (প্রাক্কলন) তৈরি করছি। কিছু স্থানে মেরামত কাজ শুরু হয়েছে।’