Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 12:29 pm

বন্যায় ডুবে গেছে মাছের ঘের, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা

দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বেড়েই চলেছে বন্যা ও জোয়ারের পানি। বন্যায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বসতবাড়ি, মাছের ঘের, স্কুল ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেইসঙ্গে ডুবে গেছে খামারিদের মাছের ঘের ও পুকুর। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন অনেক মাছচাষি।

উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়নের পেটকাটা, রামনগর, কাফুলাবাড়ী, কলাবাড়ী, কুমুরিয়া, বৈকুণ্ঠপুর, তেঁতুলবাড়ী, বুরুয়া, রুথীয়ার পাড়, মাছপাড়া, শিমুলবাড়ী, নলুয়া, ছত্রকান্দাসহ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, মৎস্য ঘেরের ওপরে দেড় থেকে দুই ফুট পানি রয়েছে। প্রতিটি ঘেরে মাছ আটকিয়ে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে নেট ও কচুরিপানার বাঁধ।

মৎস্য খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন সপ্তাহ ধরে এ এলাকায় বন্যার পানি বেড়েই চলেছে। তবে বন্যার পানি এখন কমতে শুরু করলেও বৃষ্টিতে পানি বেড়ে সেটুকু পূরণ হচ্ছে। ফলে তাদের মাছের ঘের ও পুকুরের পাড় পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। সড়ক, বাড়িঘর, উঁচু জমিসহ ঘেরের ওপর সব ধরনের সবজিগাছও তলিয়ে গেছে।

তারা বলেন, প্রতিদিন প্রচুর বৃষ্টির কারণে এলাকায় মাছের ঘেরগুলোয় পানির পরিমাণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ভেসে গেছে মাছ।? ব্যাংক লোনসহ অনেকে কড়া সুদে টাকা নিয়ে মাছ চাষ করেছে। বন্যার পানিতে পুকুর ডুবে যাওয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে এখন নিঃস্ব এসব মাছচাষি।

পেটকাটা গ্রামের চিংড়ি ঘের মালিক অজয় কির্তনীয়া বলেন, ‘আমি এ বছর ধারদেনা করে ছয়টি মাছের ঘেরে চিংড়ি চাষ করেছি। কিন্তু বন্যায় আমার সবকটি ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সব চিংড়ি বেরিয়ে গেছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।’

 বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের মৎস্য ঘের মালিক সুশীল বৈদ্য ও প্রমথ বৈদ্য জানান, এ বছর প্রথম মাছের ঘেরে মাছ চাষ করেছেন তারা। কড়া সুদে টাকা এনে দুটো ঘের কেটে তাতে মাছ চাষ করে প্রায় ২০ লাখ টাকা দেনা হয়েছে। বন্যার শুরু থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন মাছ আটকিয়ে রাখার জন্য, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাছ আটকাতে পারেননি।

তারা বলেন, চারপাশে নেটের বাঁধ ও কচুরিপানা দিয়ে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি, সব মাছ বের হয়ে গেছে। ঘেরের ওপর দুই হাত পানি। তাই শত চেষ্টাতেও কোনো মাছ রাখা সম্ভব হয়নি বলে তারা জানান।

অপরদিকে ইউনিয়নের হিজলবাড়ী গ্রামের মৎস্য ঘের মালিক চিন্ময় হাজরা বলেন, ‘এ বছর আমি তিনটি ঘেরে সাদা মাছের চাষ করেছি। সবই এখন পানিতে তলিয়ে আছে। নেট দিয়ে বাঁধ দিয়েছি, এতে কোনো কাজ হবে বলে আমার মনে হয় না। তাই এ বছর বন্যায় আমার প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

কলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মাইকেল ওঝা বলেন, ‘সাম্প্রতিক বন্যায় আমার এলাকায় মৎস্য ঘেরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমান বন্যার পরিস্থিতি একটু নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে প্রচুর বৃষ্টির কারণে পানি কিছুটা বেড়েছে। ক্ষতির দিক থেকে কোটালীপাড়ায় উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়নে বেশি হয়েছে আমি মনে করি।’

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকার বলেন, ‘সাম্প্র্রতিক বন্যায় কোটালীপাড়া উপজেলায় প্রায় আড়াই হাজারের বেশি মৎস্য ঘের ও পুকুর বন্যায় প্লাবিত হয়েছে এবং ১৭ কোটি টাকার অধিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যদি বন্যার পানি বেড়ে যায়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ ও বেড়ে যাবে।’