নিজস্ব প্রতিবেদক: এ বছর চার দফার বন্যায় সারা দেশে পাঁচ হাজার ৯৭২ কোটি ৭৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৬ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে হিসাব দিয়েছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেন। এছাড়া আগামী মাসে আরেক দফা বন্যা হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্যাকবলিত ৩৩ জেলাসহ মোট ৪০ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৯৮ সালে দেশের ৫০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়, আর এবার প্লাবিত হয়েছিল ৩০ ভাগ এলাকা। এবারের বন্যা ৪৬ দিন স্থায়ী ছিল। এবারের বন্যায় ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, শস্যক্ষেত, বীজতলা, মৎস্য খামার, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সড়ক, ব্রিজ ও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি অনুযায়ী পুনর্বাসন পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
এনামুর রহমান জানান, এবার ২৬ জুন প্রথম দফায় বন্যা শুরু হয়। ১০ জুলাই দ্বিতীয় দফা, ১৯ জুলাই তৃতীয় দফা ও ১৮ আগস্ট উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়। ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রণালয়গুলো ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নেবে। সে অনুযায়ী মন্ত্রণালয়গুলো কর্মপরিকল্পনা পেশ করেছে। সেটা নিয়ে পুনর্বাসন পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দ্রুত পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালু করার নির্দেশ দিয়ে যেখানে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, সেখানে তা খরচ করতে বলেছেন। আরও অর্থের প্রয়োজন হলে তিনি বরাদ্দ দেবেন। তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন ঘরবাড়ির ওপর। কারণ পানি নেমে গেছে, মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। বাড়ি গিয়ে যাতে মানুষের কষ্ট না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রত্যেক মানুষের ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ করে দিতে বলেছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতে টিন ও নগদ অর্থ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রতিমন্ত্রী জানান, বন্যা পুনর্বাসন কর্মসূচিতে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বন্যা ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি নির্মাণ ও মেরামতে প্রত্যেক পরিবারকে ঢেউটিন ছাড়াও টাকা দেওয়া হবে। বন্যা পুনর্বাসনে রাষ্ট্রকে যেন আরও বন্যাসহনীয় করতে পারি, সেজন্য আরও ১১০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এক বছরের মধ্যে করা হবে। আশা করি আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি বন্যাসহনীয় রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।
বন্যার সময় দুর্গতদের দ্রুত সরিয়ে আনতে ৬০টি উদ্ধারকারী বোট নির্মাণের চুক্তি হয়েছে। তিন বছরের মধ্যে এসব পাওয়া যাবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। লোকসংখ্যা অনুযায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে বলে জানিয়ে এনামুর বলেন, সেজন্য এক হাজারটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও এক হাজারটি সাইক্লোন শেল্টার করার প্রক্রিয়া চলমান আছে।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যায় যেসব বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো জরুরিভিত্তিতে মেরামত করবে। সড়ক বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সচল করবে। কৃষি পুনর্বাসনের জন্য বীজতলা তৈরি, চারা, সার ও বীজ বিনা মূল্যে বিতরণ করবে কৃষি মন্ত্রণালয়। মৎস্য খাতে ক্ষয়ক্ষতি কাটাতে যাদের মৎস্য খামার ভেসে গেছে, তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল খোলার আগেই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মেরামত করবে।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিভিন্ন পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বলে জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। এনামুর বলেন, নগদ টাকা, জিআর চাল, শিশুখাদ্য, গবাদিপশু, শুকনা খাবার, টিন ও গৃহ নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ আছে। নতুন করে শুকনা খাবার, টিন ও কম্বলের টেন্ডার হয়েছে, আমরা সেগুলো পাব। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, অতিরিক্ত লাগলে আমরা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আরেকটি বন্যা হতে পারে এবং অক্টোবর ও নভেম্বরের মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।