নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান বন্যায় সারাদেশে ১ হাজার ১০১টি (নি¤œ মাধ্যমিক থেকে কলেজ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। দেশের ১৮ জেলার এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬ লাখ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। বর্তমানে এসবের অধিকাংশ পানিবন্দি, কোথাও আবার পানি নেমে গেলেও আসবাবপত্র, ল্যাব, খেলার মাঠ, প্রবেশ ও বাইরের রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। সেসব মেরামত ও সংস্কারকাজ ছাড়া পাঠদান শুরু করা সম্ভব নয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মাউশির পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশান উইং) অধ্যাপক মো. আমির হোসেন বলেন, বন্যায় দেশের ১৮ জেলায় ১১০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বাইরে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে, তা জানাতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সবাই ছক আকারে সেসব তথ্য পাঠাচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ৮৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্তমানে পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ১০১টি আংশিক ব্যবহার করা যাবে। বাকি ১৩২টির পানি নেমে গেলে পাঠদান করানো সম্ভব হবে। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কার কাজের জন্য প্রায় ৮ থেকে ৪০ কোটি টাকা প্রয়োজন হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
মাউশির অধীন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখা থেকে জানা গেছে, বন্যায় দেশের ১৮ জেলার ৯০টি উপজেলায় ১ হাজার ১০১টি নি¤œ মাধ্যমিক থেকে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জের ৬ উপজেলায় ৭৬টি প্রতিষ্ঠান, সিলেটের ১৩ উপজেলায় ৩০৬টি, সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় ২৬৩টি, মৌলভীবাজারের পাঁচ উপজেলায় ৪৫টি, গাইবান্ধার চার উপজেলায় ১৮টি, কুড়িগ্রামের সাত উপজেলায় ১০০টি, লালমনিরহাটের দুই উপজেলায় তিনটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩ উপজেলায় সাতটি, ময়মনসিংহের একটি উপজেলায় তিনটি, টাঙ্গাইলের পাঁচ উপজেলায় ৩৮টি, জামালপুরের পাঁচ উপজেলায় ৪৫টি, কিশোরগঞ্জের ছয় উপজেলায় ৩৮টি, শেরপুরের তিন উপজেলায় তিনটি, নেত্রকোনায় ১০ উপজেলায় ১২৩টি, বগুড়ার দুই উপজেলায় আটটি, সিরাজগঞ্জের চার উপজেলায় ২২টি, নরসিংদীর এক উপজেলায় একটি ও মানিকগঞ্জের দুই উপজেলায় দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৯০৬ ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা করে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি) সূত্র জানায়, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা এরই মধ্যে এসেছে সেগুলো মেরামত, সংস্কার এবং ক্ষেত্রবিশেষ নতুন ভবননির্মাণসহ অন্তত ৪০ কোটি টাকা লাগতে পারে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাবে এখনও তৈরি করা যায়নি।
সূত্র আরও জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব মাঠপর্যায় থেকে ডিপিই এবং ইইডিতে পাঠানো হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা পাওয়া গেলেও মাউশির অধীনে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল-কলেজের সংখ্যা এখনও পুরোপুরি আসেনি।
মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের আনুমানিক সংখ্যা পাওয়া গেলেও পানি না নামায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না, শিগগির হয়তো তা পাওয়া যাবে। তবে আমাদের বড় ক্ষতি হয়েছে সিলেট ও রংপুর বিভাগে। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় সংস্কারে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। পানি নেমে গেলেই কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।