Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 9:09 pm

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিন

প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদ-নদী যেন বাংলাদেশকে জালের মতো বেষ্টনী দিয়ে করে রেখেছে। দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নদ-নদী। নদীর সঙ্গে এদেশের মানুষের গভীর মিতালী বিদ্যমান। নদী তীরের জনগোষ্ঠীর জীবিকা নির্বাহের অন্যতম প্রধান মাধ্যম নদী। নদী এ মানুষগুলোকে যেমন আশীর্বাদের চাদরে ঢেকে রেখেছে। আবার কখনও কখনও নদী হতাশার ছাপ রেখে যায়, জীবন বিপর্যস্ত, বিপন্ন করে তুলে। বন্যা এদেশের মানুষের সবচেয়ে চিরচেনা অতিথি। বিনা নোটিশে বিনা আমন্ত্রণে প্রতিবছর নিয়ম করে হাজির হয় দেশের নানা প্রান্তে।

পাহাড়ি ঢল আর অতিভারী বর্ষণের সংমিশ্রণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবানসহ দেশের বেশ কিছু অঞ্চল হয়েছে প্লাবিত। শোনা যাচ্ছে পানিবন্দি লাখো মানুষের মর্মভেদী চিৎকার আর চারদিক জুড়ে হাহাকার। একদিকে গৃহবন্দি বর্ষার থইথই জলে, অন্যদিকে বিপর্যয় আর অসহায়ত্বের শিকলে চোখের জল নদী পেরিয়ে সমুদ্র ছুঁই ছুঁই অবস্থা। বর্ষার জল আর চোখের জল যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বান্দরবান জেলা সবচেয়ে বেশি বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। ঠিক তার পরেই আক্রান্তের দিকে রয়েছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা। চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলা বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ অঞ্চলে লাখো মানুষ নিজের ঘরেই কারাবরণ করছে। লাখো মানুষের রয়েছে ঘরবন্দির মতো নির্মম দৃশ্য। টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যার কবলে মৃত্যুবরণ করেছে এ অঞ্চলের দুইজন। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায়ই এক লাখের বেশি মানুষ ঘরবন্দি। সেখানকার কমপক্ষে ১০টি ইউনিয়ন পুরোপুরি বন্যাকবলিত। বান্দরবানের অবস্থা আরও বেশ শোচনীয়। সেখানে তিন দিনের ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে পড়েছে প্রায় শতাধিক। পাহাড়ধসে মৃত্যু হয়েছে কয়েকজনের। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবান জেলা চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বান্দরবানে বিদ্যুতের সংযোগ নেই। তথ্যপ্রযুক্তি ও আধুনিকতার এ যুগে মানুষ বিদ্যুতের ওপর ওতপ্রোতভাবে জড়িত, প্রতিটি ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ সক্রিয় ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বিদ্যুৎ ছাড়া এক মুহূর্ত চলাও অনেক বড় চ্যালেঞ্জের। ঠিক সেইখানে কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ থেকে বিচ্ছিন্ন বান্দরবান, যা তাদের অসহায়ত্বের চিত্র তুলে ধরে। রাঙামাটিতেও ১০-১২ টি জায়গায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে অল্প কিছু সংখ্যক বাড়ি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা কিছু মধ্যে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। বন্যায় যেমন মানুষ ঘরবন্দি হয়ে আছে আবার কয়েকজন মারাও গেছে। বন্যায় ঘরবাড়ি গাছপালা ফসল ফলাদিসহ নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে মানুষকে। তাই এ ক্ষতির পরিমাণটা যেন বড় না হয় এবং সেটা সমাধান পর্যায়ে নিয়ে আসা যায় সেই অনুযায়ী কাজ করা উচিত। বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আশ্রয় কেন্দ্র ঘরে তুলে আশ্রয় নেয়া মানুষকে ত্রাণ ও বাসস্থানের যথাযথ ব্যবস্থা দেয়া। দেশের যেকোনো বড় বড় মিশন ও দুঃসাধ্য কাজগুলো করে থাকে এ দেশের চৌকস সৈনিক ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। বন্যাকবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সেনা মোতায়ন করা জরুরি। যেন যে কোনো উদ্ধার মিশন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সফল করতে পারে।

খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসেবা শতভাগ নিশ্চিত করতে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘরবাড়িহীনদের তাৎক্ষণিকভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে বা স্কুল-কলেজে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে আন্তরিকতার সঙ্গে ত্রাণসামগ্রীসহ দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নষ্ট ও ভাঙা বাড়িঘর মেরামত ও পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বন্যার ভয়াবহতা যেহেতু ব্যাপক, সরকারের একার পক্ষে সামলানো কঠিন। তাই এনজিও, লায়ন্স ক্লাব, রোটারি ক্লাবসহ সব জনসেবামূলক সংস্থাকে সাহায্যসামগ্রী ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে দুর্গত এলাকায় গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর চিত্ত ও বিত্ত দুটি থাকলেও যাতায়াত, থাকাসহ অন্যান্য অসুবিধার কারণে অনেকের ইচ্ছা ও আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও দুর্গতদের পাশে যেতে পারে না।

নদীশাসনের পাশাপাশি মানসম্মত উচ্চতায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে পাশাপাশি গাছ লাগিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে আনসার ও ভিডিপিকে তদারকি করার দায়িত্ব  বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রতি অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। বরাদ্দকৃত অর্থ উপজেলাভিত্তিক উন্নয়ন কমিটির ফান্ডে জমা রাখতে হবে। যাতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ক্ষতির আগেই ব্যবস্থা নেয়া যায়।

প্রকৃতির বৈরী আচরণে নিঃস্ব এ মানুষের দুর্দশা দূর করতে প্রয়োজন স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রমের পাশাপাশি মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। বন্যাদুর্গতদের সাহায্য করার জন্য ত্রাণের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্রঋণও দিতে হবে। পানিবাহিত রোগ নিরসনে চিকিৎসাসেবা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদেরও।

জুবায়েদ মোস্তফা

শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়