স্বাধীনতা অর্জনের পর আমাদের অনেক সাফল্য থাকলেও নদীশাসন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে তেমন সাফল্য নেই। প্রতিবছরই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসলহানি হয়, হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়। স্থাপনা, অবকাঠামো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রামগঞ্জের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। নদীভাঙন যেন আমাদের সামষ্টিক নিয়তি। টানা ভারী বৃষ্টিপাতে কক্সবাজার জেলার ৯টি উপজেলায় দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুই লাখ মানুষ। সড়ক ও বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। প্রয়োজনের তাগিদে সড়কের পানি মাড়িয়ে গন্তব্যে যাতায়াত করছেন নগরীর বাসিন্দারা। বৃহত্তর চট্টগ্রামের বড় অংশ পানির নিচে।
উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে চটগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যাওয়ায় লাখ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কোথাও কোথাও পানি বেড়ে নতুন করে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আগামী দুদিন ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা আছে।
বন্যায় শহর-গ্রামের বেশিরভাগ সড়কই বন্যার পানিতে প্লাবিত। পানি ঢুকেছে মানুষের ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শহরের অনেক বাড়ি, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও দোকান ডুবে গেছে। বন্যার কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ হতে চলেছে।
দখলে-দূষণে আমাদের নদীগুলো জর্জরিত। প্রাকৃতিক কারণে এমনিতেই অনেকগুলো নদী মৃতপ্রায়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দখলদারদের দৌরাত্ম্য। তাদের তৈরি স্থাপনায় নদী হয়ে যাচ্ছে সরু। নদী নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানও অনেক। পানিপ্রবাহ বিঘিœত হয়ে নদী যেমন শুকিয়ে যাচ্ছে, তেমনই পানি দূষিত হওয়ার কারণেও নদী মরে যাচ্ছে। তাই নদী রক্ষা ও শাসনে কার্যক্রম সারা বছর চলমান থাকা উচিত। উজানের ঢল কিংবা বর্ষার ভারী বৃষ্টির ওপর আমাদের হাত নেই। কিন্তু দখল-দূষণ কমিয়ে আমাদের নদীগুলোর নাব্য বাড়াতে পারলে সেই পানি দ্রুত নিচে নেমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে মানুষের ভোগান্তি কমানো সম্ভব।
বন্যার কারণে যেসব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত তাদের জন্য খাবারদাবার ও ওষুধের ব্যবস্থা করতে হবে; অনেকের বিশেষ করে যাদের ঘরবাড়ি, কৃষি ও মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যার বীজ প্রয়োজন, তাকে বীজ দিতে হবে, যার ঘর মেরামত করতে হবে, তাকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও স্বদলপ্রীতির সুযোগ নেই। আশা করি, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সমন্বিতভাবে কাজটি করবেন। দখল ও দূষণ থেকে নদী ও খাল রক্ষা করতে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনা নিতে হবে। বন্যার মৌসুম সবে শুরু হলো। সামনের দিনগুলোয় বন্যার প্রকোপ আরও বাড়তে পারে, সে ব্যাপারেও সরকারের আগাম ও টেকসই প্রস্তুতি থাকা জরুরি। বন্যার ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও দুর্গতদের কষ্ট লাঘবকে অগ্রাধিকার দিয়ে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।