নিজস্ব প্রতিবেদক: ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে সর্বোচ্চ তিন দিন থেকে সর্বনি¤œ তিন ঘণ্টা আগে বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষদের স্মার্টফোনে বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কবার্তা পৌঁছে যাবে। এ লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতির বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা। গতকাল সোমবার বিকালে রাজধানীর পান্থপথে পানি ভবনে প্রধান অতিথি হিসেবে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক নতুন এ ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো), অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) ও আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সংস্থা গুগলের সহায়তায় একটি আধুনিক বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশে পানিসম্পদের উন্নয়ন, নদীভাঙন রোধ এবং সেচ সুবিধা সম্প্রসারণে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত কার্যক্রমে বেশিরভাগই পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এরই মধ্যে বিনিয়োগ পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সব প্রাকৃতিক বিপর্যয়মূলক ঘটনার মধ্যে বন্যা ছিল ৪৩ দশমিক চার শতাংশ। দুর্যোগের সময় মানুষ সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এ সাহায্য দেয়ার লক্ষ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এসব কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড, এটুআই ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিবিষয়ক সংস্থা গুগলের সহায়তায় একটি উন্নত বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় বাপাউবোর বিদ্যমান আগাম পাঁচ দিনের বন্যা পূর্বাভাস উপাত্তকে প্রক্রিয়াকরণ করে উন্নততর প্লাবন মানচিত্রের সাহায্যে বন্যা শুরু হওয়ার তিন দিন থেকে তিন ঘণ্টা আগে স্থানীয় জনগোষ্ঠী পর্যায়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে।
জাহিদ ফারুক বলেন, বর্তমানে গুগলের পুশ নোটিফিকেশনের (ইন্টারনেট সংযোগ চালু থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্কবার্তা আসবে) মাধ্যমে অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের এ পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। ২০২০ সালে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা নদীতীরবর্তী ১৪টি জেলার ৩৮টি উপজেলায় এ কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়।
২০২০ সালে বন্যাকবলিত এলাকার তিন লাখ অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীকে প্রায় ১০ লাখ পুশ নোটিফিকেশন পাঠানো হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সারাদেশে ১০৯টি স্টেশনে বন্যা মনিটরিং এবং ৫৫টি স্টেশন থেকে বন্যা-সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। গুগলের কারিগরি সহায়তায় ৫৫টি জেলার ৯৯টি উপজেলার বন্যাপ্রবণ এলাকার প্রায় ১০ কোটি মানুষের কাছে বন্যার আগাম তথ্য ও পূর্বাভাস প্রচার করা হচ্ছে।
গুগল ম্যাপ এবং গুগল ফিডে আগাম বন্যা-সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট সতর্কতামূলক বার্তা যাচ্ছে বলে জানিয়ে জাহিদ ফারুক বলেন, বার্তাগুলো পানির স্তরের উত্থান-পতন, বন্যার গভীরতা ও তীব্রতাসহ বন্যাকবলিত অঞ্চলের তথ্য দিচ্ছে। এছাড়া পরামর্শমূলক বিভিন্ন বার্তা, যেমনÑসুরক্ষা-সম্পর্কিত পরামর্শ ও ফসল তোলার পরামর্শও জানানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ-সংক্রান্ত পূর্বাভাস ও সতর্কতামূলক বার্তা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। হাওর ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য আগাম বন্যার বার্তা এরই মধ্যে আনা দরকার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ২০ অক্টোবর উজানের পানি তিস্তা ব্যারাজের ৫৫ থেকে ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আমি জানতে পারি, ওই দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে প্রায় তিন হাজার লোককে অ্যানড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে সতর্কতামূলক মেসেজ দেয়া হয়েছিল।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক (ভার্চুয়ালি), পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, এটুআইয়ের পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী (ভার্চুয়ালি) ও গুগল প্রতিনিধি (ভার্চুয়ালি) বক্তব্য রাখেন।