বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনে এখন থেকেই ভাবতে হবে

বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। বসতবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন দুর্গতরা। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, এ পর্যন্ত দেশের পানিবন্দি ৪৯ লাখ মানুষ।
এ বন্যাকে কেন্দ্র করে দেশের মানুষ যে ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, এটি মোকাবিলোয় সফলতা আসবেই; হয়তো কিছুটা মূল্য দিতে হবে। আমরা জানি, বন্যার পানি কমতে থাকলেও কিছু শঙ্কা দেখা দেবে। আবারও বন্যা হতে পারে। তখন দুর্ভোগ আরও বাড়বে। তাই আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

বন্যার সময় ময়লা-বর্জ্য, মানুষ ও পশুপাখির মলমূত্র এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা একাকার হয়ে এসব উৎস থেকে জীবাণু বন্যার পানিতে মিশে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে বন্যায় সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার বেড়ে যায়। বন্যার দূষিত পানি পানে হতে পারে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিসের মতো মারাত্মক পানিবাহিত রোগে মৃত্যুঝুঁঁকি বাড়ে। সাধারণ মানুষকে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারে সচেতন করতে হবে। পানি বিশুদ্ধ করার সহজ উপায়গুলো তাদের শেখানো প্রয়োজন। যেমনÑপানি ফুটানো, ফিটকারি, আয়োডিন, হ্যালোজেন ট্যাবলেট প্রভৃতি রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পানি বিশুদ্ধকরণ এবং বৃষ্টির পানি ব্যবহারের নিয়ম।

জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে। পানিবাহিত রোগ থেকে রক্ষায় অবশ্যই সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে এবং সব কাজে নিরাপদ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বন্যার পানি বা বন্যায় তলিয়ে যাওয়া নলকূপ, কুয়া বা অন্য কোনো উৎসের পানি জীবাণু দ্বারা দূষিত থাকায় কোনো অবস্থায়ই এসব পানি দিয়ে হাত-মুখ ধোয়া, কুলি করা বা পান করা যাবে না। বন্যার পানিতে গোসল করা, কাপড়চোপড় ধোয়া, থালাবাসন পরিষ্কার করা চলবে না। যতটা সম্ভব বন্যার পানি এড়িয়ে চলতে হবে। গবাদিপশুর ক্ষেত্রেও এসব পানি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

মৃত পশুপাখি বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ছড়ায়। মৃতদেহ মাটির তিন মিটার নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। খালি হাতে মৃতদেহ ধরা যাবে না। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ফিটকারি, মশার কয়েল, স্যালাইন, সাবান, জীবাণুনাশক এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরকারি-বেসরকারিভাবে সরবরাহ করা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) কলেরা নিরোধক বিশেষ টিকা কর্মসূচি নিতে পারে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সহায়তায় কলেরার টিকা কেনা ও টিকাদান কর্মসূচিতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতা নিতে পারে। বন্যাদুর্গত এলাকায় পানিবাহিত রোগ কলেরা-ডায়রিয়ার প্রকোপ ঠেকাতে কলেরার টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না, সরকার তা ভাবতে পারে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। ওয়াসার আওতাধীন এলাকা ব্যতীত সারাদেশের নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ব্যবস্থা নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে। জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা পেতে সংস্থাটি এগিয়ে আসতে পারে। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন ও রোগ প্রতিরোধে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণই কাম্য।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০