বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে, তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, পানি কমে তার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এরই মধ্যে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
গতকাল শনিবার বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীর পানি কমার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীর সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় এবং ভারতের ত্রিপুরায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানি কমার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। ফলে শুক্রবার থেকে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে এবং অব্যাহত রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের মনু, খোয়াই, ধলাই নদী-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে।

এসময় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানেও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা নদী-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে। বুলেটিনে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি কমছে, অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। এ অবস্থা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজ করছে, যা ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে বুলেটিনে জানানো হয়েছে।

শনিবার সকাল ৯টায় দেশের ছয়টি নদীর পানি ৯টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছিল। ওই সময় বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের ১১৬টি স্টেশনের মধ্যে ২২টি পয়েন্টে পানি বাড়ার প্রবণতা দেখা গেলেও কমছিল ৮৪ পয়েন্টে, আর অপরিবর্তিত ছিল চার পয়েন্টে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৯টায় কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
খোয়াই নদীর পানি হবিগঞ্জের বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর মৌলভীবাজার পয়েন্টে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল।

চট্টগ্রামের রামগড় স্টেশনে ফেনী নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
সকালে কুশিয়ারা নদীর পানি সিলেটের অমরশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছিল, আর শেওলা পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার এবং শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুনামগঞ্জের মারকুলী পয়েন্টে এই নদীর পানি বিপৎসীমার চার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল।

আর ফেনীর পরশুরাম স্টেশনের সঙ্গে ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’ হওয়ায় সেখানকার মুহুরী নদীর বিষয়ে তথ্য দিতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অতিভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক এই বন্যায় শুক্রবার রাত পর্যন্ত দেশের অন্তত ১১টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। এসব জেলায় প্রায় ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত বন্যায় ১৫ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে মন্ত্রণালয়টি।

চলমান বৃষ্টিপাত ও বন্যা পরিস্থিতিতে দেশের তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৯টা থেকে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। এছাড়া পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ৪২, কক্সবাজারের টেকনাফে ৪১, বরিশালে ২৭, ভোলায় ২৩ মিলিমিটারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় এক থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারী, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারী এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০