বয়স্কদের জন্য পুষ্টি

বার্ধক্যে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে এবং এগুলোর কার্যকারিতায় পরিবর্তন আসে। জিবের স্বাদকোষের সংখ্যা ও কার্যকারিতা কমতে থাকে। অনেকের দাঁত পড়ে যায়, লালা নিঃসরণের মাত্রাও কমে আসে। এ জন্য তাদের খাবার চিবানো ও গলাধঃকরণের ক্ষমতাও কমে যায়। বয়োজ্যেষ্ঠদের থাকে নানা ধরনের রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ প্রভৃতি। তাই তাদের খাবার ও পুষ্টি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের আলাদা করে ভাবতে হবে।

শারীরিক দুর্বলতা কমাতে এবং ত্বকের সুরক্ষা ও মাংসপেশির ভাঙন রোধে আমিষজাতীয় খাবার বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য খুবই জরুরি। আমিষের চাহিদা পূরণে দুধ, টক দই, ডিম, কাঁটা ছাড়ানো মাছ ও মাংসের কিমা দেয়া যেতে পারে। এ বয়সে বেশি চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন গরু ও খাসির চর্বিযুক্ত মাংস, মুরগির চামড়া, মগজ, জিব, ঘি, মাখন, ডালডা ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। চর্বিযুক্ত মাছ, তিলের তেল, তিসির তেল ও বাদাম খাবারে যোগ করা যেতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ, ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণে দৈনিক রঙিন চার-পাঁচ রকমের শাকসবজি এবং দুই রকমের ফল খাওয়া উচিত। মুখের রুচি বাড়াতে এবং মুখের ক্ষত সারাতে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ই এবং জিংকসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

ভিটামিন বি-৬ সমৃদ্ধ খাবার হলো চিড়া, ডাল, মটরশুঁটি, কলা, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার; গরু ও খাসির মাংস, কলিজা, ডিম, চর্বিযুক্ত মাছ, মিষ্টি আলু, পালংশাক, গাজর প্রভৃতি। খেতে হবে বাঁধাকপি, পালংশাকসহ বিভিন্ন শাক, শিম, কমলা, বাতাবিলেবু, মাল্টা, কলা, তরমুজ, টমেটো। ভিটামিন বি১-২ সমৃদ্ধ খাবার হলো দুধ, দই, ডিম, পনির, মাশরুম, চিংড়ি প্রভৃতি। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার পেয়ারা, আমড়া, আমলকী, লেবু, জলপাই, জাম্বুরা, পাকা পেঁপে ও আনারস। জিংকসমৃদ্ধ খাবার শিম, শিমের বিচি, মসুর ডাল, কুমড়াবীজ, তিল, তিসি, পালংশাক, সবুজ পাতাযুক্ত শাক। ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ খাবার বাদাম, উদ্ভিজ্জ তেল, ব্রকলি ও পালংশাক। বয়োজ্যেষ্ঠদের হাড়ক্ষয় এবং হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, যেমন দুধ, দই, পনির, কাঁচা বাদাম, সয়াবিন, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, কালো ও সবুজ কচুশাক, শজনেপাতা, পুদিনাপাতা, শর্ষেশাক প্রভৃতি খেতে হবে। বয়োজ্যেষ্ঠদের রেচনতন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। অনেকে প্রস াবের বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না বলে ভয়ে কম পানি পান করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। তৃষ্ণা না পেলেও বয়স্কদেও উচিত দিনে অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা।

মো. নাহিদ নেওয়াজ, পুষ্টিবিদ, খাদ্য ও পুষ্টি শিক্ষা বিভাগ,

ঝিনাইদহ ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ঝিনাইদহ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০