Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 2:46 pm

বয়স্কদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার অনুপাত সবচেয়ে বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ২০২২ সালে প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেশে প্রতিবন্ধিতার চিত্র প্রকাশ করেছে জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। মূলত শ্রমবাজারে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি উপলব্ধির লক্ষ্যে এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবন্ধিতার অনুপাত বাড়তে থাকে। সবচেয়ে বেশি বয়সভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিবন্ধীর হার সবচেয়ে বেশি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়। পরিসংখ্যানের তথ্যমতে, দেশে ১৫ বছর থেকে তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৩৩ লাখ ৭৯ হাজার। এর মধ্যে ১৮ লাখ ১২ হাজার পুরুষ এবং ১৫ লাখ ৬৭ হাজার নারী। অর্থ্যাৎ নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার অনুপাত বেশি।

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বের জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার সবচেয়ে বেশি। দেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বের মোট যে প্রতিবন্ধী রয়েছে, তার মধ্যে ৪৪ দশমিক ৪৭ শতাংশেরই বয়স ৬৫ বছরের ওপরে। আর ৬০ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এ হার ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অথচ ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এ হার মাত্র পাঁচ দশমিক ২১ শতাংশ। বয়সভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিবন্ধীর হার সবচেয়ে কম ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে। এই বয়সীদের মধ্যে রয়েছেন মোট প্রতিবন্ধীর তিন দশমিক ৪৯ শতাংশ। ৪৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর পরবর্তী ধাপগুলোয় ক্রমবর্ধমান হারে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর হার বেশি। ৪৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে মোট প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর চার দশমিক ৯৪ শতাংশের অবস্থান। এর পরে ৫০ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের মধ্যে রয়েছে আট দশমিক ৩২ শতাংশ।

এদিকে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বের মোট প্রতিবন্ধীর মধ্যে ২৫ লাখ এক হাজারের অবস্থান গ্রামে এবং আট লাখ ৭৮ হাজারের অবস্থান শহরাঞ্চলে। আর প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাক্ষরতার হার খুবই কম। তাদের মধ্যে নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর হার ৬২ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং সাক্ষরতার হার মাত্র ৩৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এটি জাতীয় সাক্ষরতার হারের তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে সাক্ষরতার অনুপাত প্রায় ৭৭ শতাংশ। সেই বিবেচনায় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী সাক্ষরতা অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান। এ সময় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

শাহনাজ আরেফিন বলেন, দেশের শ্রমবাজারে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী তী অবস্থায় রয়েছে, তা অনুধাবন করতে এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকারের তরফ থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা সহজতর হবে। তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম শ্রমশক্তি জরিপের ফলাফলের মধ্য থেকে প্রতিবন্ধীদের বিষয়টি পৃথক করে দেখানো হলো। পরবর্তী সময়ে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবন্ধীরা শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ আগেও স্কুলে যাননি। প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন মাত্র ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন ১৩ দশমিক ১৭ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত দুই দশমিক ৭২ শতাংশ এবং উচ্চশিক্ষাও গ্রহণ করতে পেরেছেন দুই দশমিক ৭২ শতাংশ। অন্যদিকে ভকেশনাল বা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী। বাকি ৯৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী এ ধরনের প্রশিক্ষণের সুযোগ পাননি।

প্রতিবন্ধীদের কর্মে নিয়োজনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাদের মধ্যে বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিতদের ৫২ দশমিক ১৬ শতাংশই কৃষিতে নিয়োজিত। এটি কৃষিতে নিযুক্ত জাতীয় গড় শ্রমশক্তির তুলনায় অনেক বেশি। মোট শ্রমশক্তি ৪৩ শতাংশ কৃষিতে নিয়োজিত। মূলত সেবা ও শিল্প খাতে কাজ করার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা না থাকলে মানুষ কৃষিতে নিযুক্ত হয়। প্রতিবন্ধীরা যেহেতু বিভিন্ন ধরনের ভারী কাজে যুক্ত হতে পারেন না, সে কারণে তাদের মধ্যে কৃষিতে নিযুক্তির হার বেশি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সেবা খাত। সেবা খাতে নিয়োজিত রয়েছেন মোট প্রতিবন্ধী শ্রমশক্তির ৩৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর শিল্পে নিয়োজিত রয়েছেন ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ।