বরিশালের চরকাউয়া খেয়াঘাটে শুধুই দুর্ভোগ

আরিফ হোসেন, বরিশাল: বরিশাল নগরীর কাছে কীর্তনখোলা চরকাউয়া খেয়াঘাটে দাঁড়ালে দেখা যায়, প্রতি মিনিটে যাত্রীবোঝাই ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নদী পাড়ি দিচ্ছে। একদল আসছেন নগরীর দিকে, অপর দল নগরী ত্যাগ করে যাচ্ছেন চরকাউয়ায়। খেয়ার মাঝিমাল্লা ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, দৈনিক প্রায় অর্ধলাখ মানুষ কীর্তনখোলা পাড়ি দিয়ে নগরীতে আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু এ বিপুলসংখ্যক যাত্রীর জন্য নাগরিক সুবিধার ছোঁয়া নেই এ ঘাটে।

নদীভাঙনে ঘাটের অবস্থা বেহাল। কিন্তু ৯ বছর আগে তৎকালীন মেয়র এ ঘাট ইজারামুক্ত করার পর বিআইডব্লিউটিএ কোনো দায়দায়িত্ব না নেয়ায় স্থানীয় একটি মহল কৌশলে চালাচ্ছে খেয়াঘাটে দখলবাজি।

সরেজমিনে গত সোমবার চরকাউয়া খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ভাটার সময় নগরীর প্রান্তের ঘাট থেকে পানি প্রায় আট ফুট নেমে যাওয়ার পরও গোড়ালি ডুবিয়ে যাত্রীদের ট্রলারে ওঠানামা করতে হচ্ছে। ঘাটের এ প্রান্তে বিআইডব্লিউটিএর জমি দখল করে স্থাপন করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট। এ কারণে এখানে সব সময় যানজট লেগেই থাকে।

অপরদিকে, চরকাউয়া প্রান্তে নদীভাঙনের কারণে যাত্রীদের ট্রলারে উঠতে বেগ পেতে হয়। ভরা বর্ষায় খেয়া পারাপারে সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় বেপরোয়া ট্রলার চালানো।

সোমবার দুপুর ১২টায় ঘাটে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, প্রতি মুহূর্তে ট্রলার আসছে আর যাচ্ছে। ট্রলারগুলো ঘাটে ভেড়ানোর সময় একটি আরেকটির ওপর বেপরোয়া গতিতে আছড়ে পড়ছে। এতে আতঙ্কিত হন যাত্রীরা।

কথা হয় শাওন খান নামে চরকাউয়ার এক বাসিন্দার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে আমরা দুর্ভোগ সহ্য করেই এ খেয়াঘাট থেকে যাতায়াত করছি। ঘাটের অবস্থা বেহাল। এর ওপর ঝুঁকি নিয়ে পারি দিতে হয়। অথচ এই এলাকার সবচেয়ে বড় এ খেয়াঘাট দেখার কেউ নেই।’

ঘাটের মাঝি রাকিব হাওলাদার জানান, তারা সমিতির আওতায় এখানে ট্রলার পরিচালনা করেন। ট্রলার চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ নেই।

চরকাউয়া খেয়াঘাটের এক মাল্লা বলেন, ‘ওপারের নেতারা এ ঘাট চালান। টাকা পয়সা তারাই নেন।’

চরকাউয়া মাঝিমাল্লা সমবায় সমিতির সভাপতি ওমর আলী বলেন, ‘এ খেয়াঘাটে ১০৫ জন মাঝি ও ১৫০ জনের বেশি মাল্লা রয়েছেন। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ এই ঘাট থেকে যাত্রা করেন। ৫টা রুটে ডিসিঘাট, গোমা, কাটাদিয়া, নেহালগঞ্জ, লাহারহাট, টুমচর যায় এখান থেকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তৎকালীন সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন এ ঘাটের ইজারা প্রত্যাহার করে নেন। এরপর আর বিআইডব্লিউটিএ এর তদারকি করছে না।’

ঘাটে জনদুর্ভোগ ও ঝুঁকি প্রসঙ্গে ওমর আলী বলেন, ‘দুর্ঘটনা এড়াতে মাঝিদের সতর্ক করা হয়।’ ইজারা না নিলেও একটি মহলের এ ঘাট নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি কোনো জবাব দেননি।

তবে স্থানীয় যাত্রী ও মাঝিমাল্লাদের তথ্যমতে, চরকাউয়া খেয়াঘাট থেকে প্রতি মিনিটে একটি করে ট্রলার দুই প্রান্ত থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে ছাড়ে। অর্থাৎ ৬০ মিনিটে ১২০টি ট্রলার আসা-যাওয়া করছে। প্রতিটি ট্রলারে ২০ জন করে যাত্রী তোলা হয়। সে হিসাবে এক ঘণ্টায় দুই হাজার ৪০০ মানুষ কীর্তনখোলা পাড়ি দেয়। সে অনুযায়ী, এ খেয়াঘাট থেকে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পারাপার হন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নকে নগরীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করেছে কীর্তনখোলা। এ ইউনিয়নগুলোর সীমানাঘেঁষা আরও সাতটি ইউনিয়ন আছে যেগুলো বাকেরগঞ্জ উপজেলাভুক্ত। বরিশাল থেকে সড়কপথে ভোলা ও পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় যেতে হয় চরকাউয়া খেয়া পাড়ি দিয়ে। এসব কারণে এ খেয়াঘাটে ২৪ ঘণ্টা যাত্রী পারাপর চলে। এসব যাত্রী নিয়ন্ত্রণ করে চরকাউয়ার ওপারের এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও তার অনুসারীরা।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘২০১২ সালে চরকাউয়া খেয়াঘাট উš§ুক্ত করে দেয়া হয়। ওই ঘটনায় প্রতি বছর তাদের ঘাটের জন্য অডিট অবজেকশন দিতে হয়।’ তার দাবি, খেয়া তাদের দখলে নেই। ইজারা না হলেও একটি পক্ষ তো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছে। ওই টাকা সরকারি কোষাগারে যায় না, ব্যক্তি পর্যায়ে চলে যায়।

তিনি আরও বলেন, ‘বরিশাল নৌবন্দর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়। এজন্য পন্টুন সম্প্রসারণ হবে। খেয়াঘাট দক্ষিণে চলে যাবে। তখন খেয়া সরাতেই হবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০