বরিশালে আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, আহত ২০

প্রতিনিধি,বরিশাল: জালিয়াতি মামলায় বরিশালের বাকেরগঞ্জের দাড়িয়াল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামসহ পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর ছবি তুলতে যাওয়ায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন আইনজীবী সহকারী ও ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থকরা। এতে কমপক্ষে ২০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৮ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বরিশাল আদালত প্রাঙ্গণের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত হয়ে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, বাংলা ভিশন টেলিভিশনের বরিশাল অফিসের ক্যামেরাপাসন কামাল, যমুনা টিভির ক্যামেরাপাসন শুভ, মাইটিভির ক্যামেরাপাসন শফিক, আরটিভির ক্যামেরাপাসন লিটন মোল্লা, দেশ টিভির লিটন হোসেন, মোহনা টিভির ক্যামেরাপাসন অপূর্ব, দৈনিক কলমের কন্ঠ পত্রিকার ফটোগ্রাফার ইমরান, সত্য সংবাদ পত্রিকার অলিউল ইসলাম, আমাদের বরিশাল পত্রিকার ফটোগ্রাফার নাঈম, আজকের বরিশাল পত্রিকার সাইফুল ইসলাম, মতবাদের এন আমিন রাসেল, র্কীতনখোলা পত্রিকার ফটোগ্রাফার জুয়েল, বাংলার বনের শাফিন আহমেদ রাতুল ও সুজন, কলমের কন্ঠর শামিম, তালাশ পত্রিকার হ্নদয়, বাংলাদেশ বানী জিহাগ, কাগজ পত্রিকার আকিব, সুন্দর বন পত্রিকার মিজান পলাশসহ জুয়েল, আবু কালাম আজাদ (সোহাগ), বাংলা প্রথম সকাল পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সুমাইয়া জিসান সহ মোট ২০ জন। 

আহতরা জানান, দাড়িয়াল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনকে জালিয়াতি মামলায় কারাগারে পাঠানোর খবরে আদালত প্রাঙ্গণে ফটো সাংবাদিকরা যান। এরপর সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন চেয়ারম্যানের ভাইয়ের ছেলে সুজন হাওলাদার, সাইফুল, আইনজীবী সহকারী কামরুজ্জামান, বাপ্পীসহ বেশ কয়েকজন। ম্যানেজ করতে না পেরে ইউপি চেয়ারম্যানের ছবি ধারণের সময় ফটো সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। প্রথম দফার হামলায় বেশ কয়েকজন ফটো সাংবাদিক আহত হন।

পরে প্রতিবাদ করতে গেলে ফটো সাংবাদিকদের ওপর ফের হামলা চালানো হয়। একপর্যায়ে আদালতের সামনে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয় সাংবাদিকদের। ভাংচুর করা হয় সাংবাদিকদের ৬-৭টি মোটরসাইকেল। এরপর অন্যান্য সাংবাদিকরা আদালত প্রাঙ্গণে গেলে তাদের ক্যামেরাও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করের আইনজীবী সহকারীরা।

পরে বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কবির উদ্দিন প্রামানিক ও বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলমে খোকন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, দাড়িয়াল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আদালতে ওঠার আগেই আইনজীবী সহকারীদের এক লাখ টাকা দেন, যাতে সাংবাদিকরা ছবি তুলতে না পারেন। সেই কারণে ছবি তুলতে বাধা দেওয়ার পর মূলত সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে। আইনজীবী সহকারীরা হামলায় সময় সাংবাদিকদের মোবাইল ও নগদ অর্থ লুটে নিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস জানান, আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে কিছু মাদকসেবী আইনজীবী সহকারী। আমরা দেখেছি হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে মাদক ও নারী নির্যাতনের মামলাও রয়েছে। নেশায় বুদ হয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে আইনজীবী সহকারীরা। 

বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, আহতদের বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। আপাতত আহতদের মধ্যে ১৮ জনকে ভর্তি করেছি। আমরা আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরে জানাব। বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, অনাকাঙ্খিত ঘটনার খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য বলেছি।

বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞি বিচারক কবীর উদ্দিন প্রামানিক নিজে ঘটনাস্থলে আসেন। আমরা সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী সহকারীদের নিয়ে বসে ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান করব।

সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমি দখল করেছে হিন্দু পরিবারের এটা বড় অপরাধ। তার ছবি তুলতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে সাংবাদিকরা। বিষয়টি মেনে নেওয়ার মত নয়। আমরা এই হামলাকারীদের কঠোর শাস্তি ও দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাই।

তিনি আরো বলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার না করা হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে পথে যাবো।

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যদিকে হামলায় ঘটনায় বরিশালের বিভিন্ন সংগঠন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০