বরিশালে এক দিনে কভিডে সর্বোচ্চ মৃত্যু ৩২, শনাক্ত ৮৫৮

প্রতিনিধি, বরিশাল: বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় কভিডে আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে সর্বোচ্চ ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে কভিডে সাত ও উপসর্গ নিয়ে ১১ জন মারা গেছেন। একই সময় সর্বোচ্চ কভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮৫৮ জন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের কভিডের আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ১৭ জন ও কভিড ওয়ার্ডে কভিডে আক্রান্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কভিডে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কভিডে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৫ জনের মধ্যে বরিশালে চার, ভোলায় তিন, পিরোজপুরে এক, বরগুনার চার ও ঝালকাঠির তিনজন। সব মিলিয়ে বিভাগে কভিডে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১৪ জনে। একই সময় কভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫৮ জন। এ নিয়ে বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৯৯৮ জনে। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২০ হাজার ১৭০ জন।

আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল জেলায় নতুন ৩৩৫ জন নিয়ে মোট ১৫ হাজার ৩৩২, পটুয়াখালীতে নতুন ১৮২ জন নিয়ে মোট পাঁচ হাজার চার, ভোলায় নতুন ১৭৬ জনসহ মোট চার হাজার ৫৮৭, পিরোজপুরে নতুন ৭৪ জনসহ মোট চার হাজার ৬৩৮, বরগুনায় নতুন ৬৪ জন নিয়ে মোট তিন হাজার ২০০ ও ঝালকাঠিতে নতুন ২৭ জন নিয়ে মোট চার হাজার ২৩৭ জন রয়েছেন।

এদিকে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের কভিডের আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ১৭ জন ও কভিড ওয়ার্ডে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। শেবাচিম হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ৮৩১ জন এবং কভিড ওয়ার্ডে কভিডে আক্রান্ত হয়ে ৩৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ৮৩১ জনের মধ্যে ৭৭ জনের কভিড টেস্টের রিপোর্ট এখনও হাতে পাওয়া যায়নি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত) কভিড আইসোলেশন ওয়ার্ডে ২৯ জন ও কভিড ওয়ার্ডে ১২ জন ভর্তি হয়েছেন। কভিড ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে এখন ৩৪৩ জন চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ১২০ জন কভিড ওয়ার্ডে এবং ২২৩ জন আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। আরটি পিসিআর ল্যাবে মোট ১৮৯ জন কভিড পরীক্ষা করান। এর মধ্যে ৪৮ দশমিক ১৪ শতাংশ পজিটিভ শনাক্তের হার।

এদিকে শেবাচিম হাসপাতালের কভিড ওয়ার্ডে অক্সিজেন, আইসিইউ সংকট ও চিকিৎসকদের সময়মতো না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।

জানা গেছে, এ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসায় আরও ৫০০ চিকিৎসক দেয়ার আকুতি জানিয়েছে বরিশালের প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। কাগজে কলমে এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে কভিড সংক্রমণের কারণে এখন শয্যা সংখ্যা ১৩০০। তবে হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। হাসপাতালে জনবল রয়েছে ৫০০ শয্যার অনুকূলে। তাও তিন ভাগের এক ভাগ।

৫০০ শয্যার জন্য ২২৪ জন চিকিৎসক প্রয়োজন হলেও রয়েছেন ৯৭ জন। আর এ ৯৭ জনই হাজার রোগীর চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত। বর্তমানে কভিড ইউনিটের জন্য ৩০০ বেড চালু হওয়ায় এই সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো অসম্ভব বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক।

গত বুধবার দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউসে বরিশাল জেলার কভিড-১৯ সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিশেষ মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ১০ শয্যা থেকে শুরু হওয়া কভিড ইউনিট এখন ৩০০ শয্যার। প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ রোগী ভর্তি থাকেন এখানে। আর এ ইউনিটের জন্য চিকিৎসক মাত্র দুজন। যেখানে মূল হাসপাতালেই জনবল নেই। সেখানে প্রতিদিন চিকিৎসাধীন দুই হাজার রোগী। এর মধ্যে কভিড ইউনিট চালু করায় জনবল সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। আমাদের বর্তমানে কমপক্ষে ৫০০ চিকিৎসক দরকার। এই চিকিৎসক যদি আমরা পাই তাহলে আমাদের আর চিকিৎসক সংকট থাকবে না।

ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, নার্স আমাদের যা রয়েছেÑতা দিয়ে আমরা চালাতে পারি। তবে মন্ত্রণালয় আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেবে না। তাই আমাদের স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন ৫০০-এর মতো। সবার কাছে আমার আকুল আবেদন, যারা হৃদয়বান রয়েছেন তাদের মাধ্যমে যদি আমরা স্বেচ্ছাসেবক পাই, তাহলে কভিড ইউনিটে চিকিৎসায় কোনো সমস্যা থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের কভিড ইউনিটে ৬১৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ৫৯৩টি ছোট সিলিন্ডার ও ৫০টি বড় সিলিন্ডার। আরও ৭০০ সিলিন্ডার চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। সাপ্লাইয়ে ঘাটতি না হলে এই অক্সিজেন সিলিন্ডার পেলে অক্সিজেন সম্পর্কিত আর কোনো ঘাটতিই থাকবে না বলে আশা করছি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০