শেয়ার বিজ ডেস্ক: বরিশাল নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বহুল কাক্সিক্ষত খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ৬ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতটি খাল পুনঃখননের প্রকল্প শুরু হয় গত বছরের ২২ ডিসেম্বর। ইতোমধ্যে কয়েকটি খালের খননকাজ প্রায় শেষের পথে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন করায় সিটি করপোরেশনের সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেকের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খবর ঢাকা পোস্ট।
বাসিন্দারা বলছেন, পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্ম না হওয়ায় খালপাড়ের বাসিন্দাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি করপোরেশন থেকে ভেঙে যাওয়া সড়ক সংস্কারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বরিশাল নগরীর মধ্য থেকে প্রবহমান মৃত প্রায় ২২টি খালের মধ্যে প্রথম দফায় সাতটি খাল খননের প্রকল্প গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর মধ্যে জেল খাল, সাগরদী খাল, রূপাতলী খাল, শোভা রাণী খাল, ভাটার খাল, পলাশপুর খাল ও আমানতগঞ্জ খাল পুনঃখননে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৩ লাখ টাকা।
খালগুলোর মধ্যে সাগরদী খালের ৯ কিলোমিটার খননে বরাদ্দ করা হয় ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, রূপাতলী খালের এক কিলোমিটার খননে ২৮ লাখ টাকা, চাঁদমারীর দেড় কিলোমিটার শোভা রানী খাল খননে ৩২ লাখ টাকা, ভাটার খালের ১৬০ মিটার খননে চার লাখ, পলাশপুর খালের ১৭০০ মিটার খননে ১ কোটি ৩৫ লাখ, আমানতগঞ্জ খালের ২ হাজার ৫০০ মিটার খননে ১ কোটি ৯ লাখ ও জেল খালের দুই কিলোমিটার খননে ২৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে খননকাজ শেষ হওয়ার কথা।
এর মধ্যে চাঁদমারী শোভা রানী খালের খননকাজ প্রায় শেষ। সাগরদী ও পলাশপুর খালের কাজও অগ্রসরমাণ।
২৩ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম সাগরদী এলাকার বাসিন্দা ইমরান হোসেন বলেন, খাল খনন করতে এসে এমনভাবে এক্সক্যাভেটর চালানো হয় তাতে আশপাশের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে খাল খননের কারণে সাগরদী খালের ৪-৫ জায়গায় রাস্তা ভেঙে খালের মধ্যে পড়ছে।
একই অভিযোগ ২৪নং ওয়ার্ডের জিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের। তিনি জানান, খ্রিষ্টানপাড়া থেকে আধা কিলোমিটার পাকা ও বাকি প্রায় আধা কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রক্ষায় পাইলিং না দেয়ায় খাল খনন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে খালে পড়ে গেছে। অনেক জায়গায় সড়কে বড় বড় ফাটল ধরেছে।
রূপাতলী খাল খননে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল মামুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন ভুলু বলেন, খননের কারণে কিছু সড়কের ক্ষতি হয়েছে। পাড় বাঁধাই করার সময় সড়ক সংস্কার করা হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বরিশাল জেলার সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, খাল খননের কিছু পূর্ব প্রস্তুতিমূলক কাজ আছে। খালের প্রথমেই সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। যেসব স্থানে বসতবাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে পাইলিং করতে হবে। এর মাধ্যমে ব্যক্তি সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এরপরই মূলত খনন শুরু করার কথা। কিন্তু এখন খননের নামে এক্সক্যাভেটর দিয়ে খাল খোদাই করা হচ্ছে। অনেক স্থানে জেলা পরিষদের স্টল রয়েছে, সেগুলো সরানো হয়নি। পুরোপুরি অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন শুরু হয়েছে। এই খননে নগরবাসী কতটা উপকৃত হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, খালগুলো খননের নামেই খনন হচ্ছে। এর কার্যকারিতা সুদূরপ্রসারী নয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, খননকাজের জন্য কিছু কিছু স্থানে সমস্যা হয়েছে বলে জেনেছি। এগুলো নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সংস্কার করা হবে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন জানান, খননকাজে সড়ক ভেঙে পড়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাব। কোথাও সমস্যা হলে তা সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।