বরিশালে বিলুপ্তির পথে তালের ডোঙ্গা

আরিফ হোসেন, বরিশাল: কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তালের ডোঙ্গা। নতুন প্রজন্মের কাছে নামটি অদ্ভুত মনে হতে পারে। তবে তালের ডোঙ্গা অর্থাৎ তাল গাছ থেকে তৈরি ছোট নৌকা এক সময় বেশ পরিচিত ছিল।

‘ডোঙ্গা’ শব্দের মূল উৎপত্তি হয়েছে ‘ডিঙ্গি’ থেকে। ‘ডিঙ্গি’ অর্থ ছোট। তালের ডোঙ্গা মূলত নির্মান করা হয় তাল গাছ থেকে। ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ বিল ও হাওর এলাকায় প্রচুর তালের ডোঙ্গা দেখা যেত, কিন্তু কালের স্রোতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে আজ বিলুপ্তির পথে।

এক সময় দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলার প্রায় সব গ্রামের মানুষের প্রধান বাহন ছিল এ তালের ডোঙ্গা। পিরোজপুরের আটঘর কুড়িয়ানা, বরিশালের উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, স্বরূপকাঠী, বানারীপাড়া, আগৈলঝাড়া ও ঝালকাঠিসহ বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর তালের ডোঙ্গার ব্যবহার ছিল। এটি মূলত মাছ ধরা, শাপলা তোলা, শামুক সংগ্রহ অথবা স্রোতহীন কোনো বিল পার হওয়ার জন্য ব্যবহƒত হতো।

বরিশালে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য এ প্রতিবেদক সদর উপজেলার রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে যান। তখন বিলের মধ্যে রাখা একটি তালের ডোঙ্গা দেখেন তিনি। পরে তালের ডোঙ্গাটির স্বত্বাধিকারীর খোঁজখবর নেন তিনি। ডোঙ্গাটি মালেক নামে কৃষকের বলে জানতে পারেন তিনি। প্রায় একঘণ্টা অপেক্ষার পরে দেখা মিলে মালেকের সঙ্গে।

তিনি বলেন, আমি অনেক বছর ধরে এ ডোঙ্গাটি ব্যবহার করে আসছি। এ গ্রামে শুধু আমারই তালের ডোঙ্গা আছে। আমি ডোঙ্গাটি গরুর ঘাষ কাটার কাজে ও বিলে মাছ ধরার জন্য ব্যবহার করে থাকি।

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান যুগের সন্তানরা তো এখন তালের ডোঙ্গা কি সেটা চিনে না। তবে প্রবীণরা বলেন, ‘এখনও বর্ষা মৌসুমে আমরা তালের ডোঙ্গার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করি’।”

বরিশালের প্রবীণরা বলেন, তালের ডোঙ্গা স্রোতের মধ্যে চলতে পারে না। একসময় ছোটখাটো কাজ করার জন্য তালের ডোঙ্গা প্রসিদ্ধ ছিল। বিনোদনের জন্য নদী ও খাল বিল এলাকায় আয়োজন করা হতো ‘ডোঙ্গার বাইচ’। সর্বোচ্চ দুজন মানুষ এক সঙ্গে ডোঙ্গায় চলাচল করতে পারত। এর বেশি হলে ডুবে যেত। বর্ষা মৌসুমে চলাচলের জন্য তালের ডোঙ্গা ব্যবহƒত হতো।

এরপর কথা হয় ওই গ্রামের মৎস্যজীবী কুদ্দুস মিয়ার সঙ্গে। তিনি প্রায় ১০ বছর আগে ডোঙ্গা তৈরি করে সেই ডোঙ্গা দিয়ে সারা বছর খাল থেকে মাছ ধরে কড়াপুর বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এলাকার মানুষ তার কাছে ডোঙ্গা তৈরির জন্য বায়না দিতেন। তার কাছ থেকে জানা যায়, তাল গাছের আধিক্যের কারণে এ এলাকায় ডোঙ্গা তৈরি সহজ ছিল। অনেকে ডোঙ্গা তৈরি ও সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তালের ডোঙ্গা নির্মাতারা হারিয়ে গেছেন, সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছে ডোঙ্গাও। বর্তমানে দেশে ডোঙ্গা তৈরি হয় না বললে চলে।

তালের ডোঙ্গা পরিবেশবান্ধব ও সহজ নৌযান। এ ধরনের নৌযান টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০