আরিফ হোসেন, বরিশাল: মশার উপদ্রব থাকলেও ঢাকা ফেরত ব্যতীত বরিশাল নগরে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, প্রাকৃতিক অবস্থান, আগাম প্রস্তুতি ও সচেতনতার কারণে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু ও পীতজ্বরের মতো মারাত্মক দুটি রোগের বাহক এডিস মশার উপদ্রব তেমন একটা নেই। তবে এ কারণে অবহেলা করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই ডেঙ্গু জ্বররোধে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলা উচিত সবার। বিশেষ করে টবসহ বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা পানি অপসারণ ও নিজ বাড়ির আঙিনাসহ আশেপাশের এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত সবার। আর সরকারি সংস্থার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও এগিয়ে আসা উচিত সবার। কারণ সমন্বিত উদ্যোগই ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারে।
যদিও নগরবাসী বলছে, ডেঙ্গু সংক্রমণ ঝুঁকির এ সময় গত বছর বা তার আগের বছর যেভাবে প্রচারণা এবং প্রশাসনিক তৎপরতা দেখা গেছে এবারে তুলনামূলক সেই দৃশ্য দেখা বরিশালে মেলেনি।
নগরের দক্ষিণ আলেকান্দার বাসিন্দা সুমন খান বলেন, বিগত সময়ে মশার উপদ্রব ঠেকাতে বিশেষ করে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব ঠেকাতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বসিক) পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের নানা তৎপরতা মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হতো। শুধু প্রচারেরই সীমাবদ্ধ নয়, বাস্তবেও তার রূপ দেখা গেছে। যেমন গত বছর নির্মাণাধীনসহ সন্দেহজনক বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে যারা বে-খেয়ালে ছিলেন তারাও সচেতন হতে বাধ্য হয়েছেন। আবার ঢাকা থেকে আসা লঞ্চ ও বাসে নিয়মিত স্প্রে করার মতো বিষয়গুলোও ছিল আলোচনায়। তবে এবারে সে ধরনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। অথচ ঢাকা ফেরত মানুষগুলো ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ঠিকই হচ্ছেন।
নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মন্টু হাওলাদার বলেন, বর্ষার আগে ড্রেন ও খাল পরিষ্কার শুরু করে বসিক। বিভিন্ন খালে ওপরের স্তরের ময়লা অপসারণ করায় সেখানে পানির প্রবাহ ফিরে আসায় মূল শহরে মশার উপদ্রব তুলনামূলক বিগত সময়ের থেকে এবারে কম। তবে বর্ধিত এলাকাসহ মূল শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকার খালগুলোয় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থাকায় এবং জঙ্গল হয়ে পানি আটকে যাওয়ায় সেখানে মশার উপদ্রব রয়েই গেছে। যদিও সিটি করপোরেশন বলছে, নগরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা খালগুলোয় পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনার যে কাজটি করা হচ্ছে, তা পুরোটাই একটা চলমান প্রক্রিয়া।
নিজস্ব জনবল ও যন্ত্রাংশ দিয়ে এ কাজটি করায় কিছুটা সময় লাগছে, তবে পর্যায়ক্রমে সব খালই পরিষ্কার করা হবে। তবে সম্প্রতি ব্যানার অপসারণ ঘিরে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বসিকের বিরোধের পর সব কাজে ছন্দপতন ঘটায় খাল পরিষ্কার ও খননের কাজটিও স্থবির হয়ে পরেছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
পরিচ্ছন্নতা বিভাগের প্রধান ডা. রবিউল ইসলাম বলছেন, সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশে গোটা শহরকে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি মশার বংশবিস্তার রোধে তরল স্প্রে ও ফগার মেশিনের মাধ্যমে স্প্রে নিয়মিত করা হচ্ছে। এমনকি সম্প্রতি চালু হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোসহ বাসাবাড়ির আশপাশে মশক নিধনে স্প্রে করা হয়েছে।
যদিও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডলের মতে, সরকারি সংস্থারগুলোর পাশাপাশি মশার বংশবিস্তার রোধে ব্যক্তি পর্যায় থেকে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। চিকিৎসক, জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি যে অবস্থানেই থাকি না কেন, নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অপরকে সচেতন করতে হবে। নিজের বাড়ি ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখায় উদ্যোগী হতে হবে।
তবে স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাস গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে অনেকটাই জরাজীর্ণ। নিজস্ব জনবল থাকা সত্ত্বেও ইন্টার্ন ডক্টরস হোস্টেলের আশপাশের নিচু জমিতে দীর্ঘদিন ধরে পানি জমে রয়েছে। বড় আগাছায় জঙ্গলে পরিণত ওই সব জায়গা। এমনকি কলেজের আশপাশের এলাকাও জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।
বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কলেজ বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেনি কেউ। তাই নিচু জমিতে পানি জমে থাকাসহ আগাছাগুলো বড় হয়ে গেছে। আর এ কারণে আশপাশের এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি, সিটি করপোরেশন নিয়মিত ওষুধ দিয়েও তা রোধ করতে পারছে না।