বরিশাল আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়ে খুশি গৃহহীনরা

আরিফ হোসেন, বরিশাল: বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাইয়ের গিলাতলীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বর্তমানে অনেক পরিবার বসবাস করছে। কয়েক মাস আগেও যাদের থাকার জায়গা বা ঘরবাড়ি ছিল না। এখন তারা সবাই স্থায়ী ঠিকানার বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিতে পারছেন। থাকার ঘরটাও নিজের, কারও আশ্রিত নয়। এটা যেন এখনও তাদের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। সরকারের কাছে এখন তাদের শুধু ছোট্ট একটি দাবি সেখানে শিশুদের জন্য একটি স্কুল তৈরি।

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ঘরে ২ থেকে ৪ জন শিশু আছে। আশপাশে নেই কোন স্কুল। তাই বেশিরভাগ শিশুর পড়ালেখা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আশ্রয়ণের মধ্যেই একটি স্থায়ী বা অস্থায়ী স্কুলের দাবি তাদের।

নগরীতে ভিক্ষা করতেন রাজিয়া। স্বামী কবির তালুকদার ভ্রাম্যমাণভাবে শ্রমিকের কাজ করতেন। ৩ সন্তানকে নিয়ে রসুলপুর বস্তিতে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। এখন তার স্থায়ী ঠিকানা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ।

রাজিয়া বলেন, মাসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে হতো। খায় বা নাই খায় মাস শেষের আগে ঘর ভাড়ার টাকা গুছিয়ে রাখতে হতো। টানাটানির সংসারে খুব কষ্ট হতো ভাড়া দিতে। কিছু করার ছিল না। বাচ্চাদের নিয়ে থাকার জন্য একটা ঘর তো দরকার। আল্লাহর রহমতে সরকার ঘরের ব্যবস্থা করেছে। এখন আর আমাদের থাকতে কোনো ভাড়া দিতে হয় না। নিজের ঘর হয়েছে। তাই ভাড়ার টাকাটা বেঁচে যাওয়ায় তা সংসারের কাজে খরচ করতে পারি।

রাজিয়ার স্বামী কবির তালুকদার বলেন, এখন একটাই সমস্যা টাকার অভাবে ঘরে মিটার আনতে পারিনি। মিটার পেতে ঘর প্রতি ৪০০ টাকা দিতে হচ্ছে বিদ্যুৎ অফিসকে। কিন্তু এখানকার অনেকেই সে টাকা দিতে না পারায় বিদ্যুৎ পায়নি। রাজিয়ার মতো সবাই বলেন আমরা সরকারকে এবং জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই। এখন আমাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একটা স্কুলের ব্যবস্থা করলেই হয়। সরকারের কাছে আর আমাদের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু আমাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য একটি স্কুল দরকার।

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, সরকারের গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় গিলাতলীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে শিশুদের জন্য একটি অস্থায়ী স্কুলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ শনিবার এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে।

ঘরে বিদ্যুতের সংযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি প্রায় প্রতিদিনই আশ্রয়ণে যাই। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার কথা কেউ বলেনি। আমি খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ওই মানুষগুলোর কিছু দিন আগেও কোনো স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। এখন তাদের নিজেদের জমি ও ঘর হয়েছে। বর্তমান সরকারের নির্দেশনা রয়েছে দেশে কোনো ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকতে পারবে না। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি।

তিনি বলেন, নতুন করে আরও অনেক আবেদন জমা পড়েছে। আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করছি। বর্তমানে তৃতীয় ধাপে দেড় হাজারের বেশি ঘরের নির্মাণকাজ চলমান ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যা চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। প্রসঙ্গত, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বরিশাল জেলায় প্রথম দফায় ১৫৫৬টি দ্বিতীয় দফায় ৫৪৯টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ঘর বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় মোট ৩ হাজার ৯৬১টি ঘরের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০