বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে বাসচালকদের গলার কাঁটা থ্রি-হুইলার

আরিফ হোসেন, বরিশাল : যাত্রা আরও নিরাপদ করতে এক্সপ্রেসওয়ের পর বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ কম গতির যান চলাচল বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছেন পরিবহন চালক-শ্রমিকরা। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু করার পরও এ মহাসড়কে থ্রি-হুইলার রাজত্ব করছে। ফলে দূরপাল্লার বাসচালকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে থ্রি-হুইলার। এখনই এসব থ্রি-হুইলার বন্ধ করার জন্য দাবি করছেন বাসচালক ও শ্রমিকরা।

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বরিশালে আসা পরিবহন চালক মোখলেসুর রহমান বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারণে ঢাকা-বরিশাল রুটের ফেরিযুগের অবসান ঘটল। এখন থেকে আর কাউকে ফেরিঘাটের অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হবে না এবং ফেরিতে বসে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে আর কোনো মৃত্যুর ঘটনাও ঘটবে না। তবে যাত্রা নিরাপদ করতে এখন শুধু প্রয়োজন ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত মহাসড়ক থেকে থ্রি-হুইলার, যেমন অটোরিক্সা, অটোভ্যান, সিএনজি, মাহিন্দ্রা, নছিমন, করিমন, টমটম ও ভ্যানগাড়ির মতো তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ করা।

এগুলো চলাচল বন্ধ হলে আমরা একটু নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘেœ গাড়ি চালাতে পারব। তিনি বলেন, ট্রাক ও বাসের চেয়ে স্বল্প গতির যানবাহন ও থ্রি-হুইলারের কারণে মহাসড়কে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। আর থ্রি-হুইলারের চালকরা তেমন একটা দক্ষও নন। তবে খুব দ্রুত থ্রি-হুইলারের সঙ্গে মহাসড়কের পাশে থাকা হাটবাজার ও দোকানপাটগুলো অপসারণ করা প্রয়োজন।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিনই ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে অনেকটা। কিন্তু ফরিদপুরের ভাঙ্গার পর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কজুড়ে থ্রি-হুইলার অবাধে চলাচল করছে। ফলে নির্বিঘেœ গাড়ি চালানো সম্ভব হয় না।

এছাড়া সড়কের পাশে থাকা হাটবাজার ও দোকানপাট আরও বেশি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অনেক জায়গায় দেখা যায়, মহাসড়কের পাশ ধরেই গাছ কেটে ফেলে রেখেছেন স’মিলের মালিকরা। এককথায় ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কটি অনেকটা বিপজ্জনক।

ঈগল পরিবহনের চালক মো. আলম বলেন, শুধু মহাসড়কের পাশে বাজার আর থ্রি-হুইলারের কারণে বরিশাল শহরের কাশিপুর গরিয়ারপাড়, রহমতপুর উজিরপুরের ইচলাদি, জয়শ্রী, গৌরনদীর বাটাজোর, মাহিলারা, টরকী, বার্থীসহ বেশ কিছু স্থানে বাজার এলাকা পার হতে ভোগান্তির শেষ থাকে না আমাদের। আবার বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত যেতে নথুল্লাবাদ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে যারা থ্রি-হুইলার চালান, তাদের যে আচরণটি সব থেকে ভয়ের, সেটি হলো আকস্মিক যানবাহন ঘুরিয়ে ফেলা, সড়কের মাঝে চলে আসা, নয়তো সাইড লেন থেকে আকস্মিক মহাসড়কে উঠে আসা। এ সময় পরিবহন চালকরা আকস্মিক ব্রেক করলে গতিতে থাকা গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। একইভাবে বাজার এলাকায় মানুষজন আপনমনে রাস্তা পার হন। এখনকার বাসগুলোয় শব্দ না থাকায় কেউ যদি রাস্তা পার হতে ডানে-বাঁয়ে না তাকান তাহলেই বিপদ। আর বাজার এলাকায় যে যার মতো রাস্তা পার হওয়ার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের দপ্তর সম্পাদক অমল চন্দ্র দাস বলেন, নছিমন, করিমনসহ মহাসড়কে আতঙ্কের নামই হচ্ছে থ্রি-হুইলার। এগুলোর চলাচল বন্ধ না হলে দুর্ঘটনা বাড়বে। আর এখন তো বরিশাল-ঢাকা রুটে উচ্চগতিসম্পন্ন বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে, এর সংখ্যা আরও বাড়বে। তাই এখনই সময় এগুলো মহাসড়ক দিয়ে উঠিয়ে দেয়ার। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর এখনও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে মহাসড়কে যানবাহন চালানোর ক্ষেত্রে দক্ষ চালক নিয়োগের কথা বলছেন যাত্রীরা। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগেই দূরপাল্লার রুটের বাস মালিকদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, যেন এ রুটে দক্ষ ও লাইসেন্সধারী চালক নিয়োগ করা হয়। কেননা নতুন বাস নিয়ে যেসব চালক বরিশালে বা বরিশাল থেকে যাত্রীপরিবহন করবেন, তারা সবাই এ রুটেও নতুন। সেতু চালুর পর সচেতনতা আর নির্ধারিত সময়ের বেশি যাতে বাস ড্রাইভিং না করে, সে বিষয়ে কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০