প্রতিনিধি, নীলফামারী: ভোট বর্জন আর কেন্দ্র দখলের অভিযোগের মধ্য দিয়ে পঞ্চম ধাপে নির্বাচন শেষ হয়েছে। গতকাল রোববার নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী রাফিকা আক্তার জাহানের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল, এজেন্ট বের করে দেয়া, ভোটার ও সমর্থকদের হুমকি এবং ভোটদানে বাধা দেয়ার অভিযোগ তোলেন আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পাটির প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম ও বিএনপির প্রার্থী রশিদুল হক সরকার।
বেলা সোয়া ১১টায় শহরের পাঁচমাথা মোড়ের নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন জাতীয় পাটির (লাঙ্গল) প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হচ্ছে না। কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে এলেও ভেতরে থাকা নৌকার লোকজন ইভিএমে ভোটারদের কাছ থেকে আমার ভোট নৌকায় নিচ্ছেন। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেছে প্রশাসন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রের বাইরেও প্রশাসনের লোকজন আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিয়েছে। সৈয়দপুর হিন্দি স্কুল কেন্দ্রে মনিরুজ্জামান নামে এক পুলিশ সদস্য লাঙ্গলের ভোটারদের বের করে দেন। এমনকি ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। শুধু প্রশাসনই নয়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও আমার কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের হুমকি প্রদান করে কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন। আমার নিশ্চিত বিজয় দেখে তারা এমন হীন কাজে জড়িত হয়েছেন। এ অবস্থায় আমার ভোট বর্জন করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে সিদ্দিকুল আলমের স্ত্রী ইয়াসমিন আলম, জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল দিদার দিপু, সৈয়দপুর জাপা নেতা ডা. সুরত আলী, সৈয়দপুর সরকারি হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট সুমনা আলম, শহীদ জিয়া শিশু নিকেতন কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট ইতি-সহ সৈয়দপুর জাতীয় পার্টির অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিকাল সাড়ে ৩টায় নিজস্ব কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির প্রার্থী রশিদুল হক সরকার। এসময় তিনি কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
অপরদিকে একই অভিযোগে বেলা ১টায় নির্বাচন বর্জন করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের মো. নুরুল হুদা।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল প্রার্থী আবিদ হোসেন (গাজর), মো. সালাম রেজা (পঞ্জাবী). মো. কালাম (টেবিল ল্যাম্প), ইমতিয়াজ আহমেদ (ডালিম) ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তারিক আজিজ (পানির বোতল) পারভেজ আক্তার খান (ডালিম), পারুল বেগম (গাজর) আসলাম বুদু (পাঞ্জাবী) দুপুরে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
তাদের অভিযোগ ওই দুই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে বিরোধী প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন। তারা বিরোধী ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদান করে কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চারজন ভোট বর্জন করেছেন। সেখানে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী জোবায়দুর রহমান শাহিন (উটপাখি)। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ছয় প্রার্থীর মধ্যে ভোট বর্জন করেছেন চারজন। সেখানে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আবুল কাশেম সরকার (উট পাখি)।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফজুল করিম। তিনি বলেন, ‘অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। কোনো প্রার্থী ভোট বর্জন করলে সেটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’
১৫টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮৭ প্রার্থী এবং পাঁচটি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২১ প্রার্থী রয়েছেন। পঞ্চম ধাপে জেলার সৈয়দপুর পৌরসভায় ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ওই ভোট গ্রহণে পৌরসভাটিতে প্রথমবারের মতো ইভিএম ব্যবহƒত হয়েছে। ইভিএমে ভোট দিতে পেরে আনন্দিত ভোটাররা।
পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার দেলোয়ার হোসেন (২৫) পূর্ব বোতলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন সকাল সোয়া ৯টায়। এবার প্রথম ইভিএম ব্যবহার করে ভোট দিতে পেরে আনন্দিত তিনি। ভোট দেয়ার আনন্দে তিনি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে অনেক কথা শুনেছিলাম। এমন কথা শুনে একটা ভীতি কাজ করেছিল আমার মধ্যে। কিন্তু বাস্তবে এসে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ভোট দিলাম। ভোট প্রদানেও কম সময় লেগেছে।’
পৌরসভাটিতে ভোট গ্রহণ শুরু হয় সকাল ৮টায়, চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে রাফিকা আক্তার জাহান বেবী, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মো. রশিদুল হক সরকার, জাতীয় পাটির লাঙ্গল প্রতীকে সিদ্দিকুল আলম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকে মো. নুরুল হুদা, মোবাইল ফোন প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রবিউল আউয়াল রবি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।