ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোয় জলাবদ্ধতা একটি মৌলিক সমস্যা। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর এ সমস্যায় সবচেয়ে বেশি নাকাল। এ জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত ড্রেনেজ ও সোয়ারেজ ব্যবস্থা। কিন্তু বছরব্যাপী খোঁড়াখুঁড়ি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শহরের অনেক অঞ্চলের ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকে ভঙ্গুর। এতে অল্প বৃষ্টিতেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া জরুরি।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘এক ঘণ্টার ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় পানি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গত শনিবার ঢাকায় সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত এক ঘণ্টায় ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে। কারওয়ান বাজারে জমে প্রায় হাঁটুসমান পানি। বৃষ্টির পর রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বরের দক্ষিণ মণিপুরের মোল্লাপাড়া ও পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বর্ডার বাজারে হাঁটুসমান পানি জমে যায়। এছাড়া ধানমন্ডি-২৭, মোহাম্মদপুর, হাতিরঝিলের মহানগর এলাকার সামনের কিছু অংশ, মগবাজার, মধুবাগসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি জমে।
সামান্য বৃষ্টিতে এমন জলাবদ্ধতা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এক শহরের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য তার আয়তন অনুযায়ী কী অনুপাতে ড্রেন ও নর্দমা থাকতে হবে, তার একটি প্রকৌশলগত মাপকাঠি রয়েছে। সেটি অনুসরণ করে নর্দমা তৈরি করা আবশ্যক। আবার শহরের পানি কোন দিক দিয়ে নিষ্কাশিত হবে, সেদিকে ঢালু করে ড্রেন বসাতে হয়। কিন্তু প্রকৌশলগত ত্রুটির কারণে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থাপিত ড্রেন দিয়ে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। উল্টো অন্য অঞ্চলের পানি ঢুকে পড়ছে। এর বাইরে আরও যে কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় তা হচ্ছে নর্দমাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ না করা।
বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ। ফলে এখানকার ভূ-প্রকৃতির গঠনে পলিমাটির অস্তিত্ব সবচেয়ে বেশি। আর শুষ্ক মৌসুমে এ পলিমাটি ধূলিকণার রূপ নেয়। এসব ধূলিকণা বিভিন্ন ড্রেনে প্রবেশ করে পানি চলাচলের গতি রোধ করে। নর্দমাগুলো যাতে সচল থাকে, সে জন্য নিয়মিতভাবে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা করা হয় না। ফলে আকস্মিকভাবে বেশি বৃষ্টিপাত হলেই শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। এছাড়া সড়কের নির্মাণ ত্রুটির কারণেও বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। সড়ক রোলিং করার সময় সমভাবে সব জায়গায় পরিমাণমতো বিটুমিন ও পাথর দেয়া না হলে জায়গায় জায়গায় নিচু থেকে যায়। এসব নিচু স্থানে পানি জমে থাকে কয়েকদিন পর্যন্ত। আর সড়কে জমে থাকা এ পানিতে মশা বংশবিস্তার করে। এমন পরিস্থিতিতে নগরীর পানি নিষ্কাশনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই যাতে রাজধানীর নর্দমা ব্যবস্থা সচল করা যায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে সজাগ হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।