বশেফমুবিপ্রবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ

প্রতিনিধি, জামালপুর : জামালপুরের মেলান্দহে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) শিক্ষকরা ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তিন দিনের কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এতে গতকাল বুধবার বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা গ্রহণ ও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান থেকে বিরত থাকেন তারা।

বুধবার সকাল থেকে পরীক্ষা ও পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রেখে তিন দিনের কর্মবিরতি শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শিক্ষকরা তাদের ১০ দফা দাবি-সংবলিত স্মারকলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ বরাবর প্রদান করেন। 

স্মারকলিপিতে শিক্ষকরা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির নবম সভায় শিক্ষক সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তকে রেজুলেশনে বিকৃতভাবে লিপিবদ্ধ করা ও ১২তম সিন্ডিকেট সভায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষকদের হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা, হলের ডাইনিং পরিচালনায় ভর্তুকি প্রদান, পরিবহন পুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পৃথক পৃথক যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা রাখা, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে মূল ও রেফারেন্স বইয়ের একাধিক মাস্টারকপিসহ উন্নতমানের দেশি-বিদেশি বই, জার্নাল সরবরাহ ও লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ ও অটোমেসনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট আধুনিকীকরণ, স্মার্ট ক্লাসরুম ও আধুনিক ল্যাব সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানান। স্মারকলিপিতে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল, গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো শিক্ষকের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনের ব্যয় প্রদান, গেস্ট হাউসে রুম বরাদ্দ, আসবাবপত্র, দপ্তরের আধুনিকায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নাগরিক সেবাগুলো ইন্টারনেটে প্রদর্শন, শিক্ষাছুটি, সিটিজেন চার্টার, ই-নথি, ই-টেন্ডারিং চালু করারও দাবি জানান। তাছাড়া ‘বঙ্গমাতা রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ নামে স্বতন্ত্র একটি ইনস্টিটিউট চালু, গবেষণা অনুদান প্রদান, অন্যান্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, আর্থিক ও অন্যান্য বিষয় ব্যবস্থাপনা ও বিধিগুলোর সর্বোত্তম চর্চার দাবি জানান। বার্ষিক বাজেট বরাদ্দের পর সেমিনারের মাধ্যমে সব খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ও ব্যয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিতকরণ, শিক্ষা-ছুটি, পেনশন ও অন্যান্য নীতিমালা প্রণয়ন সংক্রান্ত কমিটিতে একাধিক শিক্ষক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করে নীতিমালা, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় কর্মরতদের অভিজ্ঞতা গণনা করা, পদোন্নতি প্রাপ্যতার তারিখ থেকে আর্থিক সুবিধাদিসহ পদোন্নতি প্রদানেরও দাবি জানানো হয়।

স্মারকলিপি প্রদান শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান, সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আল-মামুন সরকার, ফিশারিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আবদুস ছাত্তার সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষক হিসেবে প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা নিরসনকল্পে আমাদের এ স্মারকলিপি প্রদান। আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক, একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হোক। একাডেমিক অভিন্ন নীতিমালা, পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করার মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষক সমাজের এ কর্মবিরতির মতো কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত ক্লাসে ফিরে যেতে। এখানে দাবিগুলোর বেশিরভাগই শিক্ষার্থীদের জন্য। ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ, তাদের সুবিধাগুলো আগে দিতে হবে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে, শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে বিভিন্ন বিভাগের চলমান ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফিশারিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ফিশ প্রসেসিং তত্ত্বীয় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ জানান,  বিষয়টি নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০